১৬ মাসে সর্বোচ্চ লেনদেন শেয়ারবাজারে, আছে উদ্বেগও
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন আবারও দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়াল। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। ঢাকার বাজারে এটি গত প্রায় সাড়ে ১৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছিল ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, ওই দিন ১ হাজার ৮১১ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
লেনদেনের পাশাপাশি আজ ডিএসইতে সূচকেরও বড় উত্থান হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৬৭ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮১ পয়েন্টে। গত ১৮ জানুয়ারির পর এটিও ডিএসইএক্সের সর্বোচ্চ অবস্থান।
বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার পর আজই প্রথমবারের মতো বাজারে লেনদেন দেড় হাজার কোটি টাকা ছাড়াল। শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২২ সালের ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস আরোপ করেছিল। ফলে বাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড বিএসইসির বেঁধে দেওয়া ওই দামের নিচে নামতে পারত না। ২১ জানুয়ারি প্রথম দফায় বিএসইসি ৩৫টি কোম্পানি বাদে বাকি সব প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়। আর দ্বিতীয় দফায় ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয় ২৩ জানুয়ারি। বর্তমানে শেয়ারবাজারে মাত্র ১২টি কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপিত আছে।
বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে শেয়ারের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বিনিয়োগকারীরা বাজারে বেশি সক্রিয় হতে শুরু করেছেন, যার প্রভাবে লেনদেন ও সূচক বাড়ছে। তবে বাজারে সূচক ও লেনদেনের এ ঊর্ধ্বগতির মধ্যে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে কিছু বাজে কোম্পানির শেয়ার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের প্রধান নির্বাহী আজ প্রথম আলোকে বলেন, বন্ধ ও নিম্নমানের কোম্পানির যেভাবে দাম বাড়ছে, তা বাজারের জন্য অশনিসংকেত। এখন এসব শেয়ারের লাগাম টানা না হলে তা পুঁজিবাজারে আবারও বিপর্যয় ডেকে আনবে। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বন্ধ কোম্পানি খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ফ্যামিলিটেক্স, শ্যামপুর সুগারসহ বেশ কিছু কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন। আজও এসব শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।
ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেন, কোনোভাবেই বন্ধ ও বাজে এসব কোম্পানির অস্বাভাবিক দাম দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই হবে না। ফলে যখন কোম্পানিগুলোর দাম কমতে শুরু করবে, তখন দেখা যাবে সার্বিকভাবে বাজারই নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত এখনই এসব শেয়ারে লাগাম টানা।
ঢাকার বাজারে আজ ৩৯৫ প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়। তার মধ্যে ৩২১টিরই দাম বেড়েছে, কমেছে ৪৪টির। আর অপরিবর্তিত ছিল ৩০টির দাম। অর্থাৎ আজ লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৮১ শতাংশেরই দাম বেড়েছে।