শেয়ারবাজার বিমুখ হয়ে গেছে একটি প্রজন্ম, দাবি ডিবিএর

দীর্ঘদিন ধরে মন্দাবস্থার কারণে একটি প্রজন্ম শেয়ারবাজার বিমুখ হয়ে গেছে। এ কারণে শেয়ারবাজারে নতুন কোনো বিনিয়োগকারী আসছেন না। আবার বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকার মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ।

সংগঠনটি ৪০ বছরের পুরোনো একটি ব্রোকারেজ হাউসের তথ্য তুলে ধরে জানায়, গত পাঁচ মাসে ওই ব্রোকারেজ হাউসে মাত্র ২৪ থেকে ২৫টি নতুন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব খোলা হয়েছে। অথচ একটি সময় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসে দিনে শতাধিক বিও হিসাব খোলা হতো। গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতির যতটা উন্নতি হয়েছে, তার কোনো প্রতিফলন বাজারে নেই। এ জন্য বেশ কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানি ছাড়া ভালো কোনো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসেনি। এ ছাড়া বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিরও ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে বাজারের প্রতি একটি প্রজন্ম আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এমন পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজার নিয়ে নতুন করে কোনো গণজাগরণ তৈরি করতে না পারলে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে মনে করেন ডিবিএ নেতারা।

বাজেট-উত্তর এক সংবাদ সম্মেলনে শেয়ারবাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি এভাবেই তুলে ধরেছেন ডিবিএ নেতারা। আজ মঙ্গলবার মতিঝিলে ডিএসই ভবনে ডিবিএ কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির বক্তব্য তুলে ধরেন সভাপতি সাইফুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিবিএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাইফউদ্দিন, সহসভাপতি ওমর হায়দার খান, পরিচালক দস্তগীর মো. আদিল, মফিজউদ্দিন, সুমন দাশ প্রমুখ।

ডিবিএ নেতারা মনে করেন, শেয়ারবাজারের দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা সমাধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে শুরু করে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাজারসংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সম্মিলিত ব্যর্থতা রয়েছে। এখন সেই ব্যর্থতা ভুলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে, তা না হলে শেয়ারবাজার বিমুখ হওয়া একটি প্রজন্মকে বাজারে আনা যাবে না।

ডিবিএ বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই শেয়ারবাজার ধুঁকছে। এ অবস্থায় বাজারকে স্বাভাবিক ধারায় ফেরাতে হলে নীতিসহায়তা দরকার। তাই আমরা আশা করেছিলাম বাজেটে কিছু নীতিসহায়তা দেওয়া হবে। কিন্তু নীতিসহায়তার বদলে মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনের ওপর নতুন করে করারোপ করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করেছে; যার ফলে বাজেটের পর বাজারে টানা পতন চলছে।

এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মূলধনি মুনাফার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু বাজারের যে পরিস্থিতি, এখন মূলধনি মুনাফার ওপর করারোপের সময় নয়। তাই আমরা এ সিদ্ধান্ত এক বছরের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। পাশাপাশি কীভাবে সহজে মূলধনি মুনাফার ওপর থেকে কর কাটা হবে, তার একটি পথনকশা আশা করছি। বর্তমানে যে বিধান করা হয়েছে, তাতে উচ্চ সম্পদশালী বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে এই করহার গিয়ে দাঁড়াবে ৪১ শতাংশের বেশি। এত কর দিয়ে কোনো সম্পদশালী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবেন না। এ ছাড়া মূলধনি লোকসান সমন্বয়ের বিষয়ে সুস্পষ্ট ও কার্যকর ব্যাখ্যা দরকার। বাজেটে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।’