২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দাম কমার সীমা বেঁধেও পতন থামানো গেল না

নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া নতুন মূল্যসীমা গতকাল থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে দিনের শুরুতে প্রধান সূচকটি ১০০ পয়েন্ট কমে গিয়েছিল।

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারের দামের বড় পতন ঠেকানোর একটি চেষ্টা হিসেবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা নতুন মূল্যসীমা বেঁধে দিয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সেই উদ্যোগ কাজে আসেনি। উল্টো দরপতনের সীমা বেঁধে দেওয়ার দিনেই বাজারে বড় দরপতন হয়েছে।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল সূচক ডিএসইএক্স গতকাল বৃহস্পতিবার দিন শেষে ৬০ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৫১৮ পয়েন্টে। গত তিন বছরের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ মে ডিএসইএক্স সূচক ৫ হাজার ৫১১ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

একই দিন দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটি ১৬৪ পয়েন্ট বা ১ শতাংশের বেশি কমেছে। সূচকের পাশাপাশি দুই বাজারে লেনদেনও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে গতকাল থেকে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশে বেঁধে দেয় বিএসইসি। গত বুধবার বিকেলে এ আদেশ জারি করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে গতকাল তালিকাভুক্ত কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম ৩ শতাংশের বেশি কমার সুযোগ ছিল না। তবে এ নিয়ম কার্যকর করার পর লেনদেনের প্রথম ঘণ্টাতেই ডিএসইর প্রধান সূচকটি ১০০ পয়েন্ট কমে যায়। এ সময় লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ পর্যন্তই কমে যায়। ফলে দিনের শুরুতে সূচকের বড় পতন হয়। 

নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়া। এর জন্য সুশাসনের উন্নতির পাশাপাশি বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। 
ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক চেয়ারম্যান, বিএসইসি

ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩০০টির বা ৭৬ শতাংশেরই দাম কমেছে। দাম বেড়েছে ৬৯টির বা ১৭ শতাংশের, আর অপরিবর্তিত ছিল ২৭টির বা ৭ শতাংশের। ঢাকায় লেনদেন ছিল ৫১১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৯২ কোটি টাকা কম। আর চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন হয় ১১ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ১৫ কোটি টাকা কম।

শেয়ারবাজারে বড় ধরনের মূল্য পতনের জন্য বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ঘনঘন নীতি পরিবর্তনকে প্রধান কারণ বলে মনে করছেন। প্রথম আলোকে তাঁরা বলেছেন, অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই বারবার নীতি বদলের ফলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

অনির্ধারিত বৈঠক

জানা গেছে, বাজার-অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই শেয়ারের দাম কমার নতুন সীমা বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। তাদের এ উদ্যোগের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছে ডিএসই। গতকাল সকালে জরুরি ভিত্তিতে ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান।

ডিএসইর পর্ষদ সদস্যরা বিএসইসির চেয়ারম্যানকে বলেন, আলাপ-আলোচনা ছাড়া হুটহাট এ ধরনের নীতি সিদ্ধান্ত বদল কোনো ইতিবাচক ফল দেবে না। জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান ডিএসইর পরিচালকদের জানান, এটি সাময়িক সিদ্ধান্ত। বাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছে, তাতে এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিকল্প ছিল না। বিএসইসির চেয়ারম্যান দরপতনের এ সময়ে ডিএসইর ‘নিশ্চুপ’ ভূমিকারও সমালোচনা করেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মো. হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বাজার উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছি। এ সময় আমরা বলেছি, বাজারকে তার স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দেওয়া উচিত। বিএসইসিও আমাদের এ যুক্তির সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।’

বিএসইসি এবং ডিএসই সূত্রে জানা যায়, শেয়ারের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশে বেঁধে দেওয়ার ঘটনায় নিজেদের উদ্বেগ বা ভিন্নমত জানাতেই অনির্ধারিত এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় দুই সংস্থার মধ্যে। এ সময় খারাপ কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্তি ও তালিকাভুক্ত কোম্পানির কার্যক্রমের বিষয়ে ডিএসইর পর্যালোচনা বা মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া ডিএসইকে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।

আইসিবির সহায়তা কামনা

বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে বিএসইসি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহায়তা চেয়েছে। গতকাল আইসিবির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি এই সহায়তা চায়। এ জন্য গতকাল সকালে আইসিবির চেয়ারম্যান ও এমডিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ডেকে পাঠানো হয়। বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে আইসিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে বড় ধরনের বিনিয়োগ সহায়তা দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য সংস্থাটির নেই। তবে অর্থসংস্থানের নানা চেষ্টা চলছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, আইসিবির দুই শীর্ষ ব্যক্তিকে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজারে আইসিবির বিনিয়োগ যেন ঢেলে সাজানো হয়। যেসব শেয়ারসূচক বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে, সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও সেসব শেয়ারে আইসিবিকে বিনিয়োগের পরামর্শ দেয় বিএসইসি।

বিএসইসির মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে নানা চেষ্টা চলছে। অনেক ভালো কোম্পানির শেয়ারের দাম অবমূল্যায়িত বা যৌক্তিক দামের অনেক নিচে নেমে এসেছে। আশা করছি এসব শেয়ার কিনতে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবেন। তাতে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।’

তবে বাজারসংশ্লিষ্ট ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরও বেশি অনাস্থা তৈরি করেছে। তাঁরা বলছেন, অতীতে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়ে বিএসইসি ভুল করেছিল। নতুন মূল্যসীমা আরোপের ফলে বাজারে বিক্রির চাপ আরও বেড়ে যাবে। কারণ, যাঁরাই শেয়ার বিক্রি করতে চাইবেন, তাঁদের সবাই দিনের শুরুতে ৩ শতাংশ কম দামেই শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামবেন। ফলে বাজারে আরও বেশি অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়া। এর জন্য সুশাসনের উন্নতির পাশাপাশি বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। কারসাজি রোধে কঠোর হতে হবে। বারবার নীতির বদল বাজারকে উল্টো অস্থির করে তোলে।