শেয়ারবাজারের আরও ৩১ কোম্পানির কার্যক্রম তদন্ত করবে ডিএসই

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আরও ৩১ কোম্পানির কার্যক্রম তদন্ত করবে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিগুলোর কারখানা ও প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন এবং তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হবে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সম্প্রতি ৩১টি কোম্পানির ওপর বিস্তারিত তদন্তের জন্য ডিএসইকে অনুমোদন দিয়েছে। কোম্পানিগুলো হলো আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, ড্রাগন সোয়াটার, জুট স্পিনার্স, বিচ হ্যাচারি, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, ডেল্টা স্পিনার্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, এফএএস ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, জেনারেশন নেক্সট, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, ইমাম বাটন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মিরাকেল ইন্ডাস্ট্রিজ, অলিম্পিক অ্যাকসেসরিজ, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, আরএন স্পিনিং, রূপালী ব্যাংক, সাইফ পাওয়ারটেক, শ্যামপুর সুগার মিলস, তাল্লু স্পিনিং, তুংহাই নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ঝিলবাংলা সুগার মিলস, কাট্টলি টেক্সটাইল, হিমাদ্রি ও ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস। এর মধ্যে প্রথম ২৯টি কোম্পানি ডিএসইর মূল বাজারে তালিকাভুক্ত, আর শেষের দুটি যথাক্রমে হিমাদ্রি ও ইউসুফ ফ্লাওয়ার মিলস ডিএসইর এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত।

বিদায়ী ২০২৩ সালে ডিএসইর পক্ষ থেকে গত বছর তালিকাভুক্ত অর্ধশতাধিক কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়। প্রথম দফায় গত আগস্ট ১৪ কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম তদন্তের অনুমোদন দিয়েছিল বিএসইসি। এ দফায় নতুন ৩১টি কোম্পানির কার্যক্রম তদন্তের অনুমোদন দেয় বিএসইসি।

তদন্তের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর সার্বিক চিত্র উঠে আসবে। তার ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে। এরই মধ্যে যেসব কোম্পানির প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে এসেছে, তার ভিত্তিতে কিছু বন্ধ কোম্পানি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ রেজাউল করিম, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র, বিএসইসি।

তদন্তের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ডিএসইর এ উদ্যোগকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বাগত জানায়। এ তদন্তের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর সার্বিক চিত্র উঠে আসবে। তার ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে। এরই মধ্যে যেসব কোম্পানির প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রক সংস্থার হাতে এসেছে, তার ভিত্তিতে কিছু বন্ধ কোম্পানি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।

ডিএসই সূত্রে জানা যায়, তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানির বেশির ভাগই দীর্ঘদিন ধরে সিকিউরিটিজ আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান যথাযথভাবে পরিপালন করতে পারছে না। কোনো কোনো কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেও তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। আবার কিছু কোম্পানি তো উৎপাদনেই নেই। কিছু কোম্পানি বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করে না। ফলে এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা লাভবান হচ্ছেন না।

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, তারা আগের দফার ১৪টি কোম্পানির ওপর তদন্ত প্রতিবেদন ইতিমধ্যে বিএসইসিতে জমা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিএসইসির পক্ষ থেকে এসব কোম্পানির বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উল্টো কারসাজির কারণে কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

জানতে চাইলে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে ১৪ কোম্পানির কার্যক্রম নিয়ে করা তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রক সংস্থায় জমা দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আরও কিছু কোম্পানিতে তদন্তের অনুমোদন পাওয়ার পর সেগুলোর সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

নতুন করে যে ৩১ কোম্পানির ওপর তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে ৪টি ভালো মানের কোম্পানির গ্রুপ ‘এ’  শ্রেণিভুক্ত, ১৫টি মাঝারি মানের ‘বি’ এবং ১০টি দুর্বল মানের ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। আর দুটি এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, খারাপ কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন করে খুব বেশি কিছু করা যাবে না। বড়জোর এসব কোম্পানিকে তালিকাচ্যুত করা যেতে পারে। তাই তালিকাভুক্তির পর ব্যবস্থা না নিয়ে তালিকাভুক্তির আগেই কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা উচিত। তা না হলে বিনিয়োগকারীরা বারবার ক্ষতিগ্রস্তই হবেন।