ঢাকার বাজারে লেনদেন আবারও ৪০০ কোটি টাকার নিচে
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন আবারও ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমেছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৬৮ কোটি টাকা, যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ গত ৪ জানুয়ারি ঢাকার বাজারে সর্বনিম্ন ৩৪৪ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল।
ঢাকার বাজারে লেনদেন কমলেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেন সামান্য বেড়েছে। আজ সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২ কোটি টাকা বেশি। লেনদেনের ক্ষেত্রে দুই বাজারে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র থাকলেও দুই বাজারেই দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকার বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স মঙ্গলবার আরও ২৩ পয়েন্ট কমে নেমে এসেছে ৫ হাজার ৭৩৮ পয়েন্টে। গত প্রায় তিন বছরের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ১১ মে সূচকটি ৫ হাজার ৭২৪ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। চট্টগ্রামের বাজারের সার্বিক সূচকটিও এদিন প্রায় ৭৫ পয়েন্ট কমেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে এখন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগে খরা চলছে। নতুন করে এখন কেউ আর বিনিয়োগ করছেন না। উল্টো টানা দরপতনে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এ কারণে অনেকটাই প্রাণহীন হয়ে পড়েছে বাজার।
লেনদেন কমে যাওয়ায় গতকাল ঢাকার বাজারে কোনো খাতেই শতকোটি টাকার লেনদেন হয়নি। ডিএসইতে আজ সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ওষুধ খাতে, এ খাতের সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুটি কোম্পানিরই লেনদেন ছিল অর্ধেকের বেশি। কোম্পানি দুটি হলো সেন্ট্রাল ফার্মা ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ। এই দুই কোম্পানির সম্মিলিত লেনদেন ছিল ৩৫ কোটি টাকার। ঢাকার বাজারে মঙ্গলবার দুটি কোম্পানি লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির তালিকায় ছিল।
লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বস্ত্র খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৬ কোটি টাকা। ওষুধ খাতের মতো বস্ত্র খাতের লেনদেনের বড় অংশই ছিল কয়েকটি কোম্পানিনির্ভর। কোম্পানিগুলো হলো মালেক স্পিনিং, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও প্যারামাউন্ট টেক্সাটাইল। বস্ত্র খাতের ৪৬ কোটি টাকা লেনদেনের মধ্যে ৩০ কোটি টাকার লেনদেনই উল্লিখিত তিন কোম্পানির।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী বলেন, বাজারের টানা পতন ঠেকাতে এখন আর কোনো চেষ্টাই করছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কয়েক দিন চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সংস্থাটি এখন বাজারকে বাজারের গতিতেই ছেড়ে দিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা এ অবস্থান শেষ পর্যন্ত বজায় রাখতে পারলে তাতে দীর্ঘ মেয়াদে বাজারেরই উপকার হবে। কারণ, বাজার যদি তার নিজস্ব গতিতে ঘুরে দাঁড়ায়, তবে সেটি হবে অনেক বেশি টেকসই। তবে কারসাজি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সক্রিয় হতে হবে। দরপতনের বাজারেও দুর্বল কোম্পানির শেয়ার নিয়ে নানা ধরনের কারসাজির ঘটনা ঘটছে।
এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারকে কৃত্রিমভাবে টেনে তোলার কোনো চেষ্টা আপাতত আর করবে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। সে জন্য এখন বিক্রি থামিয়ে বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে চেষ্টাও করা হচ্ছে না।
আজ লেনদেন শুরুর প্রথম তিন ঘণ্টায় সূচক ৫০ পয়েন্টের বেশি কমে ৫ হাজার ৭০০ পয়েন্টের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। কিন্তু শেষ ঘণ্টায় সূচকটি বেশ খানিকটা পুনরুদ্ধার হয়। এতে দিন শেষে বড় ধরনের দরপতনের হাত থেকে রক্ষা পায় বাজার। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন বাজার যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই বড় ধরনের লোকসানে রয়েছেন। এ অবস্থায় এখন আর লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে চাইছেন না অনেকে।