‘ফ্লোর প্রাইস’ না তুললে শেয়ারবাজারে গতি আসবে না

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল লেনদেন কমে ২৯২ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস মো. মাহাফুজার রহমান

নির্বাচনের পরপরই ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা। তাঁরা বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস না তোলা পর্যন্ত শেয়ারবাজার তার স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে না।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে এক বৈঠকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার দাবি জানান বড় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে গতকাল বুধবার এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে দেশের শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে এ বৈঠক করে বিএসইসি। 

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম ও মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, পরিচালক শেখ মাহবুব উর রহমানসহ বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে বেশির ভাগ বক্তাই বাজারের বর্তমান তারল্য-সংকটের জন্য ফ্লোর প্রাইসকে দায়ী করেন। তাঁরা বলেন, বেশির ভাগ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগও আটকে আছে। শেয়ারের দামের কোনো ওঠানামা না থাকায় ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে আসছেন না। সব মিলিয়ে তাই বাজার গতি হারিয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সভায় বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ফ্লোর প্রাইস কোনো সুষ্ঠু সমাধান নয়। আমরাও এমনভাবে এটি তুলে নিতে চাই, যাতে ভবিষ্যতে আমাদের আর এ ব্যবস্থায় ফিরতে না হয়।’ 

বিএসইসির কমিশনারের এমন বক্তব্যের পর সভায় উপস্থিত ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা সমবেতভাবে হাততালি দিয়ে ওঠেন। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সবাই একমত হলেও কখন থেকে তা তুলে নেওয়া হবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজারে যাতে বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সে জন্য ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীদের সহায়তা চান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কর্মকর্তারা।

একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, নতুন বছরে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল অনেকটা সৌজন্যমূলক। তবে সেখানে সবাই বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের তাগিদ দেন। পাশাপাশি বাজারে ভালো মানের কোম্পানি বা আইপিও আনার পরামর্শও দেন কেউ কেউ। কারণ, ভালো আইপিও এলে তার সঙ্গে নতুন কিছু বিনিয়োগকারীও বাজারে আসেন।

বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের পর বাজারে গতি ফিরবে এমন একটা ধারণা রয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। সেই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে বাজারকে গতিশীল করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে উপস্থিত সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীরা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কথা বললেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। 

বাজার পরিস্থিতি

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন আবার ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৯২ কোটি টাকা, যা গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ২৮ মার্চ ডিএসইতে সর্বনিম্ন ২৭২ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। লেনদেন কমলেও নতুন বছরের তৃতীয় দিনে এসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৩ পয়েন্ট বেড়েছে। এর আগে বছরের প্রথম দুই কার্যদিবসেই সূচক কমেছে বাজারে। 

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, এক দিনের ব্যবধানেই ডিএসইতে লেনদেন প্রায় ৪৪ শতাংশ কমেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকার বাজারে ৫১৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। গতকাল ডিএসইতে লেনদেনের শীর্ষে ছিল স্ট্যান্ডার্ড ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, যেটির ১২ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়।