এবার শিবলীসহ ১১ জনের বিও হিসাব অবরুদ্ধ
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম, তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামসহ ১১ ব্যক্তির সব বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বিএসইসি গতকাল বুধবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাকি যে ৯ ব্যক্তির বিও হিসাব জব্দ করা হয়েছে তাঁরা হলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সিডব্লিউটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিজা চৌধুরী, শিবলী রুবাইয়াতের সময় শেয়ারবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু, তাঁর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতব্বর, বোন কনিকা আফরোজ ও ভাই সাজেদ মাতবর এবং শিবলীর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি জাভেদ এ মতিন।
বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তিদের নামে শেয়ারবাজারে যত বিও হিসাব রয়েছে, সেগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অবরুদ্ধ থাকবে। এসব হিসাব যত দিন অবরুদ্ধ থাকবে, তত দিন এগুলোতে শুধু অর্থ জমা করা যাবে, কিন্তু কোনো অর্থ তোলা যাবে না। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় এসব বিও হিসাবে কোনো শেয়ার লেনদেন করা যাবে না। শেয়ার ও বিও হিসাব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) এ সিদ্ধান্ত কার্যকরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে সব ব্রোকারেজ হাউসকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার উল্লিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিতের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। তাঁরা হলেন বিএসইসির সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম ও তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলাম, বিএমবিএর সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান, কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু, শিবলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাভেদ এ মতিন ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান সিডব্লিউটির এমডি মনিজা চৌধুরী। এসব ব্যক্তি বিএসইসির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলামের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় তাঁদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
যাঁদের বিও হিসাব অবরুদ্ধ হলো
* বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম ও তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলাম।
* বিএমবিএর সাবেক সভাপতি ছায়েদুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম।
* কারসাজিকারক আবুল খায়ের ওরফে হিরু, তাঁর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বাবা আবুল কালাম মাতব্বর, বোন ও ভাই।
* শিবলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাভেদ এ মতিন ও মনিজা চৌধুরী।
বিএফআইইউর এ-সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত ব্যক্তি ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অতীতে ও বর্তমানে কোনো হিসাব থাকলে তা ৩০ দিনের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হলো। পাশাপাশি এসব হিসাবের বিস্তারিত তথ্য পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে জমা দিতে হবে। বিএফআইইউ বলেছে, আগামী ৩০ দিন এসব ব্যক্তি ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হিসাবে কোনো লেনদেন করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তের প্রয়োজনে ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত রাখার সময় বাড়ানো হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্থগিত করা সব ব্যাংক হিসাবের সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী প্রভৃতি তথ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে হবে। পাশাপাশি এসব ব্যক্তি ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লকার-সুবিধা থাকলে সেটির ব্যবহার ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ব্যাংক হিসাব জব্দের ওই তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের বিও হিসাব অবরুদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিও হিসাব অবরুদ্ধের তালিকাটি বড় করা হয়েছে। তাতে যুক্ত হয়েছে ছায়েদুর রহমানের স্ত্রী এবং আবুল খায়ের ওরফে হিরুর পরিবারের সদস্যদের নাম।