ওয়ালটনের নেতৃত্বে আসছে তৃতীয় প্রজন্ম, নতুন কারা শেয়ার পাচ্ছেন
ওয়ালটনের মালিকানায় তৃতীয় প্রজন্মের যুক্ততা বাড়ছে। দ্বিতীয় প্রজন্মের হাত ধরেই তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিরা ইলেকট্রনিকস পণ্যের দেশীয় এই জায়ান্ট কোম্পানির মালিকানায় যুক্ত হচ্ছেন। চলতি বছরে কোম্পানিটির তৃতীয় প্রজন্মের পাঁচ উত্তরাধিকারের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ওয়ালটনের শীর্ষ নেতৃত্বে রয়েছেন কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা এস এম নজরুল ইসলামের ছেলেরা, যাঁরা দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে কোম্পানির হাল ধরেছিলেন। আর এখন দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিরা শেয়ার হস্তান্তরের মাধ্যমে তাঁদের ছেলেমেয়েদের কোম্পানির মালিকানার সঙ্গে যুক্ত করছেন।
চলতি বছর দ্বিতীয় প্রজন্মের তিন প্রতিনিধি তাঁদের পাঁচ ছেলে–মেয়ের কাছে কোম্পানির ২ শতাংশ বা এর বেশি পরিমাণ শেয়ার হস্তান্তর করেছেন। শেয়ারবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারধারী পরিচালক হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হয়। সেই নিয়ম পরিপালন করে তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিদের কোম্পানি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত করতেই এখন চলছে শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
ওয়ালটনের প্রতিষ্ঠাতা এস এম নজরুল ইসলামের পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে। তবে বর্তমানে ওয়ালটনের মূল মালিকানায় রয়েছেন পাঁচ ছেলে। তাঁরা হলেন এস এম নুরুল আলম, এস এম শামসুল আলম, এস এম আশরাফুল আলম, এস এম মাহবুবুল আলম ও এস এম রেজাউল আলম। ভাইদের মধ্যে দ্বিতীয় এস এম শামসুল আলম কোম্পানির চেয়ারম্যান, তৃতীয় ভাই এস এম আশরাফুল আলম ভাইস চেয়ারম্যান, চতুর্থ ভাই এস এম মাহবুবুল আলম ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বড় ভাই এস এম নুরুল আলম ও ছোট ভাই এস এম রেজাউল আলম পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন।
এস এম নজরুল ইসলাম ২০১৭ সালে মারা যান। এর পর থেকে কোম্পানিটির পরিচালনার সঙ্গে সার্বিকভাবে যুক্ত রয়েছেন তাঁর পাঁচ ছেলে। এর বাইরে তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে এরই মধ্যে কোম্পানির পরিচালনায় যুক্ত হয়েছেন এস এম নুরুল আলমের ছেলে মনজুরুল আলম ও মেয়ে রাইসা সিগমা এবং এস এম শামসুল আলমের মেয়ে তাহমিনা আফরোজ।
এখন নতুন করে শেয়ার হস্তান্তর করা হচ্ছে কোম্পানির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের ছেলে শাহরিয়ার আলম ও মেয়ে ফারিহা আলম, চেয়ারম্যান শামসুল আলমের দুই মেয়ে তাহমিনা আফরোজ ও সাবিহা জেরিন এবং পরিচালক এস এম নুরুল আলমের মেয়ে রিফা তাসনিয়ার কাছে।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, পরবর্তী উত্তরাধিকারীদেরকে ধীরে ধীরে কোম্পানির নেতৃত্বের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্যে তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধিদের হাতে শেয়ার দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই প্রজন্ম কোম্পানির হাল ধরবে।
ওয়ালটনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বিদেশি পণ্য আমদানি করার মাধ্যমে। ১৯৯৯ সালে চীন থেকে টেলিভিশন আমদানি করে ওয়ালটন ইলেকট্রনিকস। তবে কোম্পানির লক্ষ্য ছিল দেশেই কারখানা গড়ে তোলার। ওয়ালটনের উদ্যোক্তা প্রয়াত এস এম নজরুল ইসলাম সে লক্ষ্য পূরণে বেশি সময় নেননি। ২০০৫ সালের শেষ দিকে ওয়ালটন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে জমি কিনে কারখানা নির্মাণের কাজ শুরু করে। কোম্পানির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০০৮ সালে, ফ্রিজ তৈরির মাধ্যমে।
২০২০ সালে ওয়ালটন–হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে সাড়ে ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে। বাকি দেড় শতাংশ শেয়ার বিদেশি, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার প্রথম দেড় ঘণ্টার লেনদেন শেষে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য ছিল ৬৩১ টাকা।