শেয়ারবাজারে অনিয়ম–দুর্নীতি তদন্তে আরও কমিটি হবে
শেয়ারবাজারের নানা অনিয়ম তদন্তে আরও তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। পর্যায়ক্রমে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতির সব বিষয়ে তদন্ত করা হবে। বেক্সিমকো গ্রুপের সুকুক ও আইএফআইসি আমার বন্ডসহ ১২টি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে গতকাল রোববার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সংস্থাটি বলছে, এই কমিটিই শেষ নয়, এটা মাত্র শুরু।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘তাড়াহুড়া করে এমন কিছু করতে চাই না, যাতে কাজটা ‘কাঁচা’ থেকে যায়। আমরা শুধু জানতে চাই না, কী কী অনিয়ম হয়েছে। কোন দুর্বলতার কারণে অনিয়মগুলো সংঘটিত হয়েছে, তা–ও আমরা জানতে চাই। এ ক্ষেত্রে কমিশনের কোনো দায় ছিল কি না। যদি থাকে, কমিশন প্রয়োজনে আইন সংশোধন করবে।’
গতকাল গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদের নিয়েই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মূলত তদন্ত কমিটিকে সংবাদমাধ্যমের সামনে তুলে ধরতেই এ আয়োজন করা হয়। এ সময় বিএসইসির তিন কমিশনার এ টি এম তারিকুজ্জামান, মোহসীন চৌধুরী ও মো. আলী আকবর এবং নবগঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ইয়াওয়ার সাইদ, এনবিআরের সাবেক সদস্য শফিকুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জিসান হায়দার ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত কমিটির সদস্য ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এইমসের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাইদ বলেন, ‘১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরও কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ওই দুই তদন্ত কমিটির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। এবার কোনো রাজনৈতিক চাপ নেই। তাই যে ১২টি সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তা সুচারুভাবে সম্পন্ন করব। অনিয়ম হয়েছে, এটা বলা সহজ, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রমাণ করা কঠিন। এই কঠিন কাজটি সবাই মিলে করতে চাই। যাতে কোনো ফাঁকফোকর না থাকে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান জিয়া ইউ আহমেদ ও সদস্য ইয়াওয়ার সাইদ প্রত্যক্ষভাবে দুই সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই তাঁদের এ ধরনের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চান। জবাবে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্তের জন্য এ বিষয়টি জানা–বোঝা ও অভিজ্ঞতা থাকা দরকার। এমন লোকের খুবই অভাব। তারপরও কয়েকজনকে দায়িত্ব নিতে অনুরোধ করেছিলাম। তদন্তে বড় কয়েকটি ব্যবসায়িক গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা থাকা বা অন্য কোনো কারণে তাঁরা অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা সাহস করে এগিয়ে এসেছেন।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘কমিশন বিশ্বাস করে, তদন্ত কমিটির কোনো সদস্যের আগের কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তাঁদের তদন্তে কোনো প্রভাব ফেলবে না। কমিশন তদন্ত কমিটিকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে, তবে কোনো প্রকার প্রভাব বিস্তার করবে না। তা ছাড়া আপনারা (সাংবাদিকেরা) তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখবেন, যাতে তদন্ত সুষ্ঠু হয়।’
তদন্ত কমিটির সদস্য হওয়া নিয়ে প্রশ্নের মুখে ইয়াওয়ার সাইদ বলেন, ‘গত ২৫ বছরে শেয়ারবাজারে অনেক পীর, দরবেশ দেখেছি। পীর সাহেব থাকলে, তাঁদের মুরিদও থাকেন। তাঁরাই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। এই ২৫ বছরে শেয়ারবাজার ২৫ কদমও এগোয়নি, উল্টো পেছনে গেছে। এ তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ সৎ ও নিরপেক্ষ থেকে কাজ করবে। আমাদের কাজের বিচার করবেন, মুখ নয়, কাজ দেখে।’
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও তদন্ত কমিটির সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘এখন যে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি, আমাদের জীবনে আর কোনো দিন এমন সুযোগ পাব কি না, সন্দেহ আছে। আমাদের ওপর আস্থা রাখেন।’