ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের ব্যবসা কমেছে

রাজধানীর শাহবাগের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট (সাবেক রূপসী বাংলা ও শেরাটন)ফাইল ছবি

রাজধানীর অন্যতম পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ব্যবসা প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। ফলে বড় অঙ্কের লোকসান করেছে সরকারি মালিকানাধীন ঐতিহ্যবাহী এই হোটেল। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে হোটেলটি ব্যবসা করেছে ২৩ কোটি টাকার। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে হোটেলটির ব্যবসা কমেছে ২১ কোটি টাকা।

তবে ভাড়া ও সুদ বাবদ আয় মিলিয়ে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে হোটেলটির মোট আয় হয়েছে ২৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে চলতি বছরে প্রতিষ্ঠানটির সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫৭ কোটি টাকা, যা গত বছরে ছিল ৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ইন্টারকন্টিনেন্টালের আয় ২১ কোটি ও ব্যয় ১১ কোটি টাকা কমেছে। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময় প্রতিষ্ঠানটির লোকসান হয়েছিল ২০ কোটি টাকা, সেখানে এবার হয়েছে ৩০ কোটি টাকা।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের অবস্থান রাজধানী ঢাকার শাহবাগে। গত জুলাই মাসে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগ এলাকা ছিল উত্তাল। পরে এই আন্দোলন সহিংস ও গণ–আন্দোলনে রূপ নিলে শাহবাগ ও এর আশেপাশের এলাকাজুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলও এ সময় হামলার শিকার হয়। জুলাই-আগস্টে হোটেলটির ব্যবসায় বড় ধরনের ধাক্কা লাগে। ফলে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল একটি বৈশ্বিক চেইন হোটেল। হোটেলটির মূল মালিকানায় রয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড (বিএসএল)। আর এর পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপ। হোটেলটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান বিএসএল দেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। তাই নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি তিন মাস পর প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের আয়-ব্যয়সহ আর্থিক প্রতিবেদন দুই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে দাখিল করতে হয়। সে অনুযায়ী বুধবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রতিষ্ঠানটি তাদের সর্বশেষ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য প্রকাশ করেছে।

কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল ৩০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২০ কোটি টাকা। যদিও পরিচালন লোকসান আরও বেশি ছিল। ব্যাংকের সুদ আয় এবং হোটেলের আশপাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া অফিস ভাড়ার আয় যুক্ত হওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রকৃত লোকসান কিছুটা কমেছে।

আর্থিক প্রতিবেদন মতে, হোটেলটির মূল ব্যবসা থেকে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে আয় কমলেও খরচ কমেনি। এই তিন মাসে হোটেলটির ২৩ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে পরিচালন খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া প্রশাসনিক, ব্যাংকঋণের সুদ ও অন্যান্য খাতে খরচ হয়েছে ৪৪ কোটি টাকা। পরিচালন, প্রশাসনিক, সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ সব মিলিয়ে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে হোটেলটির খরচ দাঁড়ায় প্রায় ৫৮ কোটি টাকা। ফলে উল্লেখিত সময়ে হোটেলটির পরিচালন লোকসান দাঁড়ায় ৩৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ছিল ২৪ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হোটেলটির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, জুলাই-আগস্টে হোটেলটি প্রায় অতিথিশূন্য হয়ে পড়ে। অনেক অনুষ্ঠান আয়োজনের বুকিংও বাতিল হয়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ে মার খায় হোটেলটি। আবার গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) পরিচালনার দায়িত্ব এই হোটেল কর্তৃপক্ষের হাতে থাকলেও এ বছরের শুরু থেকে তা আর নেই। ফলে বিআইসিসির কোনো আয় এ বছর হোটেলটির আয়ে যুক্ত হয়নি। গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিআইসিসি পরিচালনা থেকে প্রায় সোয়া এক কোটি টাকা আয় করেছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল কর্তৃপক্ষ।