শেয়ারবাজারে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

শেয়ারবাজারে গতকাল মঙ্গলবার নতুন করে আরও ২৩টি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর উঠে গেছে। এর মধ্যে ২২টিরই দাম কমেছে। তা সত্ত্বেও গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২২ পয়েন্ট বেড়েছে। সেই সঙ্গে লেনদেন হয়েছে গত সাড়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।

ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা। গত ৫ জুনের পর এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। সর্বশেষ ওই দিন ডিএসইতে ১ হাজার ২৫৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। সোমবারও এ বাজারে লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল।

লেনদেনের পাশাপাশি দিন শেষে ডিএসইএক্স সূচকটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৭৬ পয়েন্টে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারে নতুন বিনিয়োগ আসছে। এ কারণে লেনদেনেও গতি সঞ্চার হয়েছে, সূচকও বাড়ছে।

আরও পড়ুন

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজার তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছিল। দীর্ঘদিন পর স্বাভাবিক লেনদেনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় নতুন করে অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছেন। বাজারে যে লেনদেন হচ্ছে, এটিও প্রত্যাশিত। ফ্লোর প্রাইস উঠে যাওয়ায় বাজার এখন একটি টেকসই রূপ পাবে বলে মনে করি।’

২০২২ সালের ২৮ জুলাই শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। ফ্লোর প্রাইস ছিল এমন একটা ব্যবস্থা, যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়েছিল। এর ফলে কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের বেঁধে দেওয়া দামের নিচে নামার সুযোগ ছিল না।

এদিকে ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল প্রকৌশল, ব্যাংক ও ওষুধ খাত। এ তিন খাতের হাতবদল হওয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪৫৩ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় ৩৮ শতাংশ। লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রকৌশল খাতের আধিপত্যের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে চারটি কোম্পানি।

কোম্পানিগুলো হলো দেশবন্ধু পলিমার, বিডি থাই, আফতাব অটো ও অলিম্পিক এক্সেসরিজ। লেনদেনে শীর্ষে থাকলেও এ খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। তার বিপরীতে খাতভিত্তিক মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে ছিল ব্যাংক খাত। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫টি ব্যাংকের মধ্যে ৩১টিরই দাম বেড়েছে। এ কারণে বেড়েছে সূচকও।

ব্যাংকের শেয়ারের মধ্যে গতকাল সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের শেয়ারের। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সাড়ে ২৯ কোটি ও রূপালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়।

এ বিষয়ে আবু আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত ডিসেম্বরে ব্যাংকগুলোর আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। ফলে সামনে ব্যাংকের লভ্যাংশের ঘোষণা আসবে। অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম এখনো অবমূল্যায়িত আছে। তাই অনেকে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। এটি বাজারের জন্য ভালো দিক। তবে সব ব্যাংকের শেয়ারই যে বিনিয়োগের জন্য ভালো, তা নয়। সে জন্য বিনিয়োগকারীদের বুঝেশুনে ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।

সেই ১২টির মধ্যে ১১টিই ফ্লোরে

বর্তমানে শেয়ারবাজারে ফ্লোর প্রাইস আরোপ রয়েছে ১২ কোম্পানির ওপর। কোম্পানিগুলো হলো আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি বা বিএটিবিসি, বেক্সিমকো লিমিটেড, বিএসআরএম লিমিটেড, গ্রামীণফোন, ইসলামী ব্যাংক, খুলনা পাওয়ার, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, ওরিয়ন ফার্মা, রেনাটা, রবি ও শাহজিবাজার পাওয়ার। এর মধ্যে গতকাল দাম বেড়ে ফ্লোর প্রাইসের ওপরে উঠে গেছে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ার। ফলে এদিন কোম্পানিটির প্রায় ৩৬ হাজার শেয়ারের হাতবদল হয়। বাকিগুলো ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকায় খুব বেশি শেয়ারের হাতবদল হয়নি।

আরও পড়ুন

অবণ্টিত লভ্যাংশ জমা না দিলে জরিমানা

তালিকাভুক্ত কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে (সিএমএসএফ) জমা দিতে বিলম্ব করলে জরিমানার বিধান করা হয়েছে। গত সোমবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করে।

আদেশে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটিজ যদি অবণ্টিত নগদ লভ্যাংশ ও বিনিয়োগকারীদের চাঁদার অর্থ তহবিলে জমা দিতে বিলম্ব করে, তবে প্রতি মাসের জন্য ২ শতাংশ হারে জরিমানা দিতে হবে। একইভাবে অবণ্টিত বোনাস লভ্যাংশ ও অধিকারমূলক (রাইট) শেয়ার তহবিলে স্থানান্তরে প্রতি মাসে বিলম্বের জন্যও গুনতে হবে ২ শতাংশ হারে জরিমানা। বোনাস ও রাইট শেয়ারের ক্ষেত্রে এ জরিমানা নির্ধারিত হবে শেয়ারের বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে।

নিয়ম অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্য লভ্যাংশ পরপর তিন বছর অবণ্টিত অবস্থায় পড়ে থাকলে তা পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিলে জমা দিতে হয়। ২০২১ সালের জুনে এ-সংক্রান্ত আইন করে বিএসইসি।