হতাশার এক অর্থবছর পার করলেন বিনিয়োগকারীরা

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

সদ্য বিদায়ী ২০২৩–২৪ অর্থবছরটি ছিল শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্য চরম হতাশার। অর্থবছরজুড়েই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের হাহাকার দেখা গেছে। বাজারের দুরবস্থার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর ব্যর্থতাকেই বড় কারণ বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি।

বিশ্লেষকেরা মনে করেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো গুটিকয় লোককে সুবিধা দিতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি কারসাজি বন্ধে নিশ্চুপ থাকার কারণে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের চিড় ধরিয়েছে। ফলে আস্থাহীনতায় ভুগতে ভুগতে বহু বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে গেছেন। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের দুরবস্থা এবং মার্জিন ঋণের উচ্চ সুদহারও শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

এ ছাড়া অর্থবছরের অর্ধেকের বেশি সময় শেয়ারবাজারকে অকার্যকর করে রেখেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইস বা শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর। এ কারণে বেশির ভাগ শেয়ারের লেনদেনই বন্ধ ছিল। ফলে খুব বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়নি।

শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের দাবির মুখে গত ১৯ জানুয়ারি থেকে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তথা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর আবার বাজারে টানা পতন শুরু হয়। তাতে বিশেষ করে ভালো মৌল ভিত্তির অনেক কোম্পানির শেয়ারের দামও সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। এভাবে টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ শেয়ারবাজার ছাড়েন।

দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সমগ্র ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ১ হাজার ১৫ পয়েন্ট বা ১৬ শতাংশ খোয়া গেছে। এই অর্থবছরের প্রথম কর্মদিবস ২ জুলাই ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৪৩ পয়েন্ট, যা শেষ লেনদেন দিবসে গতকাল রোববার কমে হয় ৫ হাজার ৩২৮ পয়েন্ট। তাতে পুরো অর্থবছরে ডিএসইএক্স সূচক ১ হাজার পয়েন্টের বেশি খুইয়েছে। অর্থবছরের শেষ কার্যদিবসেও সূচকের পতন ঘটেছে। এদিন ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ২৭ পয়েন্ট।

পুরো অর্থবছরে মন্দার কারণে শেয়ারবাজার থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন প্রায় এক লাখ বিনিয়োগকারী। শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বিনিয়োগকারীদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ও শেয়ার ধারণের তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান হলো সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের শুরুতে অর্থাৎ গত বছরের জুলাইয়ের প্রথম কার্যদিবসে শেয়ারবাজারে শেয়ার আছে, এমন বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৫২। গত ২৮ জুন বৃহস্পতিবার তা কমে হয় ১৩ লাখ ৫ হাজার ৮৮২। অর্থাৎ পুরো অর্থবছরে প্রায় ৯১ হাজার বিনিয়োগকারী তাঁদের বিও হিসাবে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। তাতে শেয়ারসহ বিও হিসাবের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।

জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংকের সুদহার অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দামে বড় অবমূল্যায়ন হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। এ ছাড়া ফ্লোর প্রাইস ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা পদক্ষেপে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি করে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ একটি অর্থবছর পার করেছেন। নতুন অর্থবছরে যদি নতুন করে আর ব্যাংকের সুদ না বাড়ে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভুল কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কারণ, টানা পতনে সামগ্রিকভাবে বাজার এখন বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। এখান থেকে খুব বেশি খারাপ হওয়ার সুযোগ কম।

এদিকে নিয়ম অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম দিনে আজ সোমবার শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ থাকবে। কারণ, এদিন ব্যাংকের লেনদেনবন্ধ থাকবে।