শেয়ারবাজারে বড় পতন, ক্রেতাসংকট চরমে

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

টানা দরপতনে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চরম হতাশা লক্ষ করা যাচ্ছে। পতন থামাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ কোনো পর্যায় থেকে কোনো উদ্যোগ না থাকায় এই হতাশা বিনিয়োগকারীদের বাজারবিমুখ করতে শুরু করেছে। এ কারণে প্রতিদিনই বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাতে বাজারে ক্রেতার সংকট দেখা দিয়েছে। তার বিপরীতে বিক্রেতা বেশি।

এ অবস্থায় আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এটাই ছিল সূচকের সবচেয়ে বড় পতন। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স এদিন ৯৭ পয়েন্ট বা প্রায় ২ শতাংশ কমেছে। এর আগে ডিএসইতে সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছিল ৪ আগস্ট, ওই দিন ডিএসইএক্স সূচকটি ১০৫ পয়েন্ট বা ২ শতাংশ কমেছিল।

বড় দরপতনের পর ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ১৬১ পয়েন্টে। গত প্রায় চার মাসের মধ্যে এটিই ডিএসইএক্সের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে গত ১৩ জুন ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ১১৮ পয়েন্টের সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, টানা দরপতনে প্রতিদিনই শেয়ারবাজার ছাড়ছেন অনেক বিনিয়োগকারী। এই দরপতনের ফলে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের অনেকের শেয়ার জোরপূর্বক বিক্রি বা ফোর্সড সেলের আওতায় পড়ছে। শেয়ারের দাম কমে যখন একটি নির্দিষ্ট সীমার নিচে নেমে যায়, তখন ঋণদাতা ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীকে নতুন করে অর্থ বিনিয়োগের তাগাদা দেওয়া হয়। যদি কোনো বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগ না করেন, তখন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক তাঁর শেয়ার বিক্রি করে ঋণ সমন্বয় করে নেয়। শেয়ারবাজারে এটি ফোর্সড সেল হিসেবে পরিচিত। বাজারে যত বেশি দরপতন হতে থাকে, ফোর্সড সেলের চাপও তত বাড়তে থাকে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুনর্গঠিত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি সরকারের দিক থেকেও মন্দা বাজারে বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ ছিল না। অন্যদিকে কারসাজির ঘটনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর পদক্ষেপের ফলে বড় বিনিয়োগকারীদের অনেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের সংকট রয়েছে। এ কারণে ঢাকার বাজারে আজ লেনদেন হওয়া ৪০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪৬টিরই দরপতন হয়েছে। দর বেড়েছে ২৭টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম।

শেয়ারবাজার নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

আজকের বড় দরপতনের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজার নিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারে অবাধ লুটতরাজ হয়েছে। এ সময়ে অসংখ্য দুর্বল ও অস্তিত্বহীন কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এসব কোম্পানি এখন বাজারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাগামহীন কারসাজির মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তি ও জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোরপ্রাইস আরোপ, সার্কিট ব্রেকারের সীমা পরিবর্তনসহ নানা ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বাজারের প্রকৃত অবস্থা ঢেকে রাখা হয়েছিল। এখন কৃত্রিম চেষ্টা না থাকায় অনিয়ম, কারসাজির অনিবার্য পরিণতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

এ অবস্থা থেকে বাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, সুশাসন নিশ্চিতে বিএসইসি ও সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরা হয় বিবৃতিতে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বাজার অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাজারের সমস্যা ও করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে বিএসইসি। পাশাপাশি ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের সরবরাহ বাড়াতে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করছে সংস্থাটি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শেয়ারবাজারের আকার ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে সরকারি কোম্পানি তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে বাজারের গভীরতা যেমন বাড়বে, তেমনি কোম্পানিগুলোর মূলধন ভিত্তিও শক্তিশালী হবে। আর এসব পদক্ষেপের সুফল পাবেন বড়, মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। অতীতের দুরবস্থা ও কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সরকার তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করে সুবিধা প্রদান করবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

এদিকে সার্বিক বাজার পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আজ বিএসইসির জরুরি এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শেয়ারবাজারে যেসব কোম্পানি দুর্বল মৌলভিত্তির জেড শ্রেণিতে স্থানান্তরিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে যারা এরই মধ্যে ন্যূনতম ৮০ শতাংশ লভ্যাংশ বিতরণ করেছে, সেসব কোম্পানিকে জেড শ্রেণি থেকে প্রযোজ্য শ্রেণিতে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।