শেয়ারবাজারে গতি আনতে ভালো শেয়ারে ঋণসুবিধা বাড়াল বিএসইসি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের লেনদেন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানি তিন বছর ধরে একটানা ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত রয়েছে এবং যাদের পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার বেশি, সেসব শেয়ারের ৫০ মূল্য আয়ের অনুপাত বা পিই রেশিও পর্যন্ত ঋণসুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করলে বাড়তি ঋণসুবিধা মিলবে। বিএসইসি আজ মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে।

আরও পড়ুন

বিএসইসির নির্দেশনায় বলা হয়, যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকার বেশি এবং তিন অর্থবছর ধরে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত রয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে ৫০ পিই পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ঋণদাতা মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলো।
উদাহরণ হিসেবে, ধরা যাক কোনো একটি কোম্পানির শেয়ারের বাজারমূল্য ১০০ টাকা। আর ওই কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস ১০ টাকা। তাহলে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়াবে ১০-এ। কারণ, শেয়ারের বাজারমূল্যকে আয় দিয়ে ভাগ করে মূল্য আয় অনুপাত হিসাব করা হয়। এখন বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ওই কোম্পানির শেয়ারের দাম ৫০০ টাকা অতিক্রম না করা পর্যন্ত ওই শেয়ারের বিপরীতে ঋণসুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। এত দিন এই ঋণসুবিধা ৪০ পিই পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। তাতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৪০০ টাকা অতিক্রম না করা পর্যন্ত ঋণসুবিধা পেতেন বিনিয়োগকারীরা।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোনের মতো ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের বাজারমূল্য ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এসব শেয়ারের লেনদেনও খুব বেশি হচ্ছে না। বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিএসইসির নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শুধু ভালো মৌলভিত্তির শেয়ার ছাড়া অন্যান্য শেয়ারের বিপরীতে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ৪০-পিইর বাধ্যবাধকতা বলবৎ থাকবে।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, শেয়ারবাজারে লেনদেন ও সূচক বাড়াতে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের ঋণসুবিধা বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বাড়তি ঋণসুবিধার কারণে বিনিয়োগকারীরা যাতে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, সে জন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শেয়ারবাজারে সূচক ও লেনদেনের ক্ষেত্রে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এসব শেয়ারের দাম বাড়লে সূচক যেমন বাড়ে, তেমনি লেনদেনেও গতি সঞ্চার হয়। বেশ কয়েক মাস ধরে শেয়ারবাজারে একধরনের মন্দাভাব বিরাজ করছে। বিশেষ করে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস আরোপের পর থেকে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের লেনদেন অনেকটা স্থবির হয়ে গেছে।

আরও পড়ুন

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, গ্রামীণফোনের মতো ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের বাজারমূল্য ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। এসব শেয়ারের লেনদেনও খুব বেশি হচ্ছে না। বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এসব শেয়ারে বিনিয়োগ বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিএসইসির এ উদ্যোগের কারণ জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, বিনিয়োগকারীদের ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগে আগ্রহী করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে অনেক শেয়ারের লেনদেনই আটকে আছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও রয়েছে আস্থার সংকট। অনেক বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে আটকে আছে। এ অবস্থায় বিএসইসির নতুন সিদ্ধান্ত বিনিয়োগ বাড়াবে কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।