কমেছে ৮৯% শেয়ারের দাম, সূচক ৫৫০০ পয়েন্টের নিচে

শেয়ারবাজারপ্রতীকী ছবি

তিন বছর পর দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচকটি আবার সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আজ রোববার বড় পতনের ফলে ডিএসইএক্স সূচকটি নেমে এসেছে ৫ হাজার ৪৩১ পয়েন্টে। এদিন ডিএসইএক্স সূচকটি এক দিনেই ৮৬ পয়েন্ট বা দেড় শতাংশ কমেছে।

তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি ফিরে গেছে তিন বছর আগের অবস্থানে। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল সূচকটি সর্বনিম্ন ৫ হাজার ৪২২ পয়েন্টের অবস্থানে ছিল। শেয়ারবাজারে সূচকের সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্ট বিনিয়োগকারীদের কাছে মনস্তাত্ত্বিক সীমা হিসেবে পরিচিত। সূচক যখন এ ধরনের সীমার নিচে নেমে যায়, তখন নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচকটিও আজ এক দিনে ২৭০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ কমে গেছে। সূচকের পাশাপাশি দুই বাজারে লেনদেনেরও বড় পতন হয়েছে। ঢাকার বাজারে লেনদেন কমে ৪০০ কোটি টাকার কাছাকাছি নেমেছে। আর চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন নেমেছে ১০ কোটি টাকার নিচে।

* ভালো ৮ শেয়ারের পতনে সূচক কমেছে ৪০ পয়েন্ট।
* ফোর্সড সেল চলছে, ঋণ সমন্বয়ের জন্য বিনিয়োগকারীদের তাগিদ।
* মূলধনি আয়ে করারোপের প্রস্তাবে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এমনিতেই গত ফেব্রুয়ারি থেকে শেয়ারবাজারে টানা মন্দাভাব চলছে। এর মধ্যে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর আগামী অর্থবছরে শেয়ারবাজারে মূলধনি আয়ের ওপর করারোপের পরিকল্পনা নিয়েছে। গত সপ্তাহে বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, শেয়ারবাজারে ৪০ লাখ টাকার ওপর মূলধনি আয়ের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছর থেকে করারোপের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে শেয়ারবাজারের মূলধনি আয়ে কোনো ধরনের কর নেই। মূলধনি আয়ের ওপর করারোপের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বাজারের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে।

ঢাকার বাজারে গত পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইএক্স সূচকটি ২৬৫ পয়েন্ট বা প্রায় ৫ শতাংশ কমে গেছে। এ সময়ের ব্যবধানে প্রায় হাজার কোটি টাকার লেনদেন নেমেছে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে। ডিএসইতে আজ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪০৯ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ২৬৮ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ কম। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন লেনদেন নেমেছে ৮ কোটি টাকায়, যা আগের দিনের চেয়ে ৫২ কোটি টাকা বা প্রায় ৮৭ শতাংশ কম।

শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় একাধিক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত কয়েক দিনের বড় দরপতনে আবারও বাজারে ব্যাপকভাবে ফোর্সড সেল বা জোরপূর্বক বিক্রি শুরু হয়েছে। কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস বিনিয়োগকারীদের খুদে বার্তা বা এসএমএস পাঠিয়ে বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের ঋণাত্মক হিসাব সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিয়ে ঋণাত্মক হিসাব সমন্বয় করা না হলে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে অর্থ আদায় করা হবে বলে বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দিয়েছে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। শেয়ারবাজারে যাঁরা ঋণ করে বিনিয়োগ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই এ ফোর্সড সেল প্রযোজ্য।

দরপতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই সীমা আরোপের পর থেকে শেয়ারবাজারে কোনো শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। কিন্তু গত কয়েক দিনের দরপতনে দেখা যাচ্ছে, লেনদেনের শুরুতেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন ঘটছে। এতে সূচকটি দ্রুত কমতে শুরু করে। দিনের শুরুতে সূচকের বড় পতন হলে পরে সেটি খুব বেশি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে যেসব শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে, এখন সেগুলোর দাম দ্রুত কমছে। লেনদেনের এক পর্যায়ে এসব শেয়ার ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ছে। আজও এ ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে বাজারে। এদিন ই-জেনারেশন, ওরিয়ন ইনফিউশন, লাভেলো, কোহিনূর কেমিক্যালস, নাভানা ফার্মা, সোনালী পেপারসহ কারসাজির মাধ্যমে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পাওয়া বেশির ভাগ শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে।

লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে রোববার সূচকের বড় পতনে ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোরই বেশি ভূমিকা ছিল। ভালো মানের ৮ কোম্পানির কারণেই ডিএসইএক্স সূচকটি ৪০ পয়েন্ট কমেছে। কোম্পানিগুলো হলো পাওয়ার গ্রিড, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বেক্সিমকো ফার্মা, রেনেটা, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, বীকন ফার্মা ও লাফার্জহোলসিম।

ডিএসইতে আজ লেনদেন হওয়া ৩৮৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৪৭টি বা ৮৯ শতাংশেরই দাম কমেছে, বেড়েছে মাত্র ২২টির বা ৬ শতাংশের, আর অপরিবর্তিত ছিল ১৯টির বা ৫ শতাংশের দাম।