সিএসইতে একদিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের তোড়জোড়, অন্যদিকে নতুন নিয়োগের ধুম
দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ছাঁটাই–আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি সিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় স্বেচ্ছায় অবসর কর্মসূচি বা ভিআরএস অনুমোদন করা হয়। নতুন এ কর্মসূচির আওতায় বেশ কিছু কর্মীকে ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেয় সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। তাতে সিএসইর কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সিএসই এরই মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের আট কর্মীকে ‘জোরপূর্বক’ স্বেচ্ছায় অবসর কর্মসূচির (ভিআরএস) আওতায় ইস্তফা দিতে নোটিশ দেয়। এর মধ্যে চারজন সংস্থাটির চট্টগ্রাম কার্যালয়ে, বাকি চারজন ঢাকা কার্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইস্তফা না দিলে ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ধরনের নোটিশ জারির কারণে স্বেচ্ছায় অবসর কর্মসূচির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বেচ্ছায় অবসর কর্মসূচি এমন একটি পদক্ষেপ, যার আওতায় সুনির্দিষ্ট কাউকে চাকরি থেকে ইস্তফার জন্য বাধ্য করা যায় না। বরং কর্মীরাই নিজেদের ইচ্ছায় এ সুযোগ নিয়ে থাকেন। কিন্তু সিএসইর ক্ষেত্রে উল্টোটি দেখা যাচ্ছে। ভিআরএসের নামে কর্তৃপক্ষ কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। ফলে সংস্থাটির কর্মীরা এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন।
সিএসইর নোটিশে বলা হয়, শেয়ারবাজারের পাশাপাশি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবসাও ভীষণ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সিএসই কর্তৃপক্ষ ব্যবসা বহুমুখীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসার এই বহুমুখীকরণের উদ্দেশ্য পূরণে পরিচালনা পর্ষদ বিদ্যমান কর্মীদের স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ তৈরি করেছে।
স্বেচ্ছায় অবসর কর্মসূচির আওতায় নোটিশ দেওয়া আট কর্মী এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তাঁরা বলেন, সিএসই কর্তৃপক্ষের এ উদ্যোগ যদি সফল হয়, তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন। ভিআরএসের কথা বলে কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক চাকরি ছাড়তে বাধ্য করছে, যা বেআইনি ও অমানবিক।
এ বিষয়ে সিএসইর এমডি সাইফুর রহমান মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বাড়তি আর্থিক সুবিধা দিয়ে কিছু কর্মীকে অবসরের সুযোগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যাঁরা এ সুযোগ নেবেন না, তাঁদের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সংস্থার মানবসম্পদ নীতি অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি এর বেশি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, পুরোনো কিছু কর্মীকে ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি নতুন কর্মী নিয়োগেরও উদ্যোগ নিয়েছে সিএসই। এ জন্য গত এপ্রিলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। মোট ১৮ জন নতুন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে ৬ জন এবং ব্যবসা উন্নয়ন, রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্সসহ বিভিন্ন বিভাগে বাকি ১২ জনের নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। একদিকে চ্যালেঞ্জের কথা বলে কর্মী ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ, অন্যদিকে নতুন কর্মী নিয়োগের নীতি নেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বলছে, মূলত সংস্থাটির প্রভাবশালী কয়েকজন সদস্যের পছন্দের লোক নিয়োগ দিতে পুরোনো কর্মীদের অনেককে ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।