শতকোটি টাকা ঋণ দেবে সিএমএসএফ

নির্বাচনের পর বাজারে গতি ফেরাতে এ ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তহবিল কর্তৃপক্ষ। ঋণের সমপরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে ঋণগ্রহীতাদের।

শেয়ারবাজারগ্রাফিকস: প্রথম আলো

দেশের শেয়ারবাজারে গতি ফেরাতে নির্বাচনের পর পুঁজিবাজার স্থিতিশীলকরণ তহবিল (সিএমএসএফ) থেকে বাজার মধ্যস্থতাকারীদের ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। সিএমএসএফ পরিচালনা পর্ষদ গত বৃহস্পতিবার এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্তের বিষয়টি এরই মধ্যে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশও করেছে সিএমএসএফ কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তরের (ফ্লোর প্রাইস) কারণে শেয়ারবাজারে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। তাই নির্বাচনের পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার জন্য জোর দাবি রয়েছে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে। গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারের শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বিএসইসির এক বৈঠকে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার দাবি ওঠে। ওই সভায় বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারাও যত দ্রুত সম্ভব ফ্লোর প্রাইস তুলে নিতে আগ্রহী। ভবিষ্যতে যাতে আর কখনো এ ধরনের ব্যবস্থা নিতে না হয়, সেটিও চায় তারা।

এদিকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে যাতে বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেটিও নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিবেচনায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীরাও চান, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার আগে বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এমন পরিস্থিতিতে সিএমএসএফ থেকে ১০০ কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিএমএসএফ সূত্রে জানা গেছে, তহবিল থেকে সরাসরি বাজারে বিনিয়োগের বিধান নেই। এ কারণে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণসুবিধা দিয়ে সেই অর্থ বাজারে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯ শতাংশ সুদে এ ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হলেও ঋণের সুদ আরও কিছুটা কমতে পারে বলে তহবিল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তা জানান।

এ তহবিল থেকে ঋণসুবিধা নিতে ঋণের সমপরিমাণ অর্থ নিজেদেরও বিনিয়োগ করতে হবে ঋণগ্রহীতা ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংককে। ধরা যাক, কোনো একটি ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংক সিএমএসএফ থেকে স্বল্প সুদে ১০ কোটি টাকার ঋণের জন্য আবেদন করেছে। এ ঋণ পেতে হলে এর বিপরীতে তাদের নিজস্ব তহবিল থেকেও ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আলাদা একটি ব্যাংক হিসাবে নিজস্ব অর্থ জমা হওয়ার পর ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সিএমএসএফ থেকে যদি ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ হয়, তার বিপরীতে ঋণগ্রহীতাদেরও ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। তাতে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হবে, তার দ্বিগুণ অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে।

জানতে চাইলে সিএমএসএফের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, এই তহবিল থেকে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়া হবে, তার সমপরিমাণ অর্থ ঋণগ্রহীতাকেও বিনিয়োগ করতে হবে। বাজারকে গতিশীল করতে তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৯ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কিছুটা কমতে পারে।

২০২১ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে সিএমএসএফ তহবিল গঠন করা হয়েছে। এই তহবিলের অবণ্টিত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০ কোটি টাকার বোনাস শেয়ার ও ৭০০ কোটি টাকা নগদ অর্থ রয়েছে।

তহবিলে থাকা নগদ অর্থ থেকে এরই মধ্যে ২২৫ কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আইসিবির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আর ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে একটি মিউচুয়াল ফান্ড গঠনে। বাকি অর্থ থেকে এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সিএমএসএফ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০২১ সালে এই তহবিল গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫০ কোটি টাকার লভ্যাংশ দাবির নিষ্পত্তি করা হয়েছে।