ইলেকট্রনিকস পণ্যের দেশীয় জায়ান্ট কোম্পানি ওয়ালটন আবারও ভালো মুনাফার ধারায় ফিরেছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) ওয়ালটন কর–পরবর্তী মুনাফা করেছে ৪২২ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। গত বছরের প্রথম তিন মাসে ওয়ালটনের কর–পরবর্তী মুনাফা ছিল ২৩৬ কোটি টাকা।
ওয়ালটন জানিয়েছে, কয়েকটি কারণে আবারও ভালো মুনাফার ধারায় ফিরেছে কোম্পানিটি। প্রথমত, বিক্রি গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, যে পরিমাণ বিক্রি বেড়েছে, তার তুলনায় উৎপাদন খরচ কম ছিল। তৃতীয়ত, ডলারের দামের উত্থান-পতন কম থাকায় এ বছর ডলারের কারণে লোকসান কম হয়েছে। এসব কারণে কোম্পানিটি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ভালো মুনাফা করেছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটি গতকাল সোমবার বিনিয়োগকারীদের সবশেষ আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য জানিয়েছে। তাতে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের পাশাপাশি গত ৯ মাসের (জুলাই-মার্চ) আয়-ব্যয়ের তথ্যও প্রকাশ করা হয়।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির মুনাফা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬২ কোটি টাকায়। তার আগের অর্থবছরের (২০২২-২৩) একই সময়ে এ মুনাফা ছিল ২৫০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের বছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ৫১২ কোটি টাকা বা ২০৩ শতাংশ বেড়েছে।
ভালো মুনাফা করার খবরে গতকাল শেয়ারবাজারে ওয়ালটনের শেয়ারের দাম সোয়া ২ শতাংশ বা প্রায় ১৪ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪৬ টাকায়। পাশাপাশি কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে। এদিন ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির ১৮ হাজারের বেশি শেয়ারের হাতবদল হয়েছে, যা গত এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ডলারে লোকসান কমেছে
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে ওয়ালটনের ৪২ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে ডলারের উচ্চ মূল্যের কারণে কোম্পানিটি লোকসান করেছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে গত বছরের প্রথম ভাগে ডলারের দামে অস্বাভাবিক উত্থান-পতন ছিল। এতে কোম্পানিটিকে ডলারের কারণে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয়েছিল। সেই তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ডলারের দামের অস্থিরতা কম ছিল। ফলে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ডলারে লোকসান কমেছে ৩৫১ কোটি টাকা। ডলারের লোকসান কমে যাওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
আয় বেড়েছে ২৮ শতাংশ
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ওয়ালটনের আয়ে বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ—এ তিন মাসে কোম্পানিটি ইলেকট্রনিকস পণ্য বিক্রি করে আয় করেছে ১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এ আয় ছিল ১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির আয় বেড়েছে ৪১৫ কোটি টাকা বা প্রায় ২৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ওয়ালটনের আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।
আয়ের ১৮ শতাংশই মুনাফা
ওয়ালটন গত জুলাই থেকে মার্চে পণ্য বিক্রি করে যে আয় করেছে, সব খরচ বাদ দেওয়ার পর তার ১৮ শতাংশই মুনাফা হয়েছে। ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ৭৬২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৪ হাজার ৮৯ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির মুনাফা ছিল ২৫০ কোটি টাকা, যা ছিল মোট আয়ের ৬ শতাংশ। সেই হিসাবে, এ বছর কোম্পানিটির মুনাফায়ও ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জানতে চাইলে ওয়ালটনের কোম্পানি সচিব মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উৎপাদন খরচ কমানোর পাশাপাশি ডলারের লোকসানও কমেছে। এ কারণে আমরা ভালো মুনাফা করেছি।’