মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের আয় যতটা বেড়েছে, মুনাফা তত বাড়েনি
সরকারি-বেসরকারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ থেকেই আয় সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি)। পাশাপাশি ঋণের সুদ বৃদ্ধির ফলে সুদ বাবদ আয়ও বেড়েছে ব্যাংকটির। কিন্তু ঋণের সুদ থেকে আয় যে হারে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয়। ব্যাংকটির অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে তাদের গত জানুয়ারি-জুন সময়কালের অর্ধবার্ষিক আর্থিক তথ্য প্রকাশ করেছে। এর আগে গতকাল রোববার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকের ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় গত জানুয়ারি ও জুন—এই ছয় মাসে এমটিবির ঋণের সুদ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৮৬১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে ঋণের সুদ বাবদ ব্যাংকটির আয় বেড়েছে ৩৭২ কোটি টাকা বা ৪৩ শতাংশ। ব্যাংক খাতে ঋণ ও আমানতের ‘নয়-ছয়’ সুদের হার গত বছরের জুলাইয়ে তুলে দেওয়া হয়। এর পর থেকে ব্যাংক খাতে আমানত ও ঋণের সুদ—দুটিই বাড়তে শুরু করে। অর্থাৎ একদিকে ব্যাংকের ঋণের সুদ বাবদ আয় বৃদ্ধি পায়, অন্যদিকে আমানতের সুদ বাবদ ব্যয়ও বেড়ে যায়। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ক্ষেত্রেও তা-ই ঘটেছে।
জানা গেছে, এমটিবির ঋণের সুদ বাবদ আয় যতটা বেড়েছে, আমানতের সুদ বাবদ ব্যয় তার চেয়ে বেশি বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) আমানতের সুদ বাবদ ব্যাংকটির খরচ হয়েছে ৮৪৮ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৭৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের সুদ বাবদ ব্যাংকটির খরচ বেড়েছে ৩৬৯ কোটি টাকা বা ৭৭ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি বিল ও বন্ডে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক যে বিনিয়োগ করেছে, সেখান থেকে আয় সবচেয়ে বেশি হারে বেড়েছে। গত জানুয়ারি থেকে জুন—এই ৬ মাসে ব্যাংকটি বিনিয়োগ থেকে আয় করেছে ৩৯৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এ খাত থেকে ব্যাংকটির আয় ছিল ২২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে এ খাতে ব্যাংকটির আয় ১৭৩ কোটি টাকা বা ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে ঋণের সুদ ও বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকটির আয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে মুনাফা বাড়েনি। চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটির কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে প্রায় ১১৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১০৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা বা সাড়ে ৫ শতাংশ। ব্যাংকটিকে গত ছয় মাসে অবশ্য খেলাপি ঋণের বিপরীতে বড় অঙ্কের নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করতে হয়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটি প্রভিশনিং করেছে প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৭০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে প্রভিশনিংয়ের পরিমাণ বেড়েছে ১৯৫ কোটি টাকা বা প্রায় ২৭৯ শতাংশ। এর বাইরে অ-শ্রেণিকৃত ঋণ ও বিনিয়োগের মূল্যহ্রাসজনিত ঝুঁকি কমানোসহ বিভিন্ন খাতের বিপরীতেও আলাদাভাবে প্রভিশনিং করেছে ব্যাংকটি। সব মিলিয়ে চলতি বছরের প্রথমার্ধে ব্যাংকটি প্রভিশনিং করেছে ৩৩৭ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৫৮ কোটি টাকা। বড় অঙ্কের প্রভিশনিংয়ের কারণেই মূলত ব্যাংকটির মুনাফা খুব বেশি বাড়েনি।