ফ্লোর প্রাইসে টান সিএসইর মুনাফায়
সিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা থেকে কমে ২৫ কোটি টাকায় নেমেছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণেই মূলত লেনদেনে ধস নেমেছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনে ধস নেমেছে। এক বছরের ব্যবধানে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে লেনদেন কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে স্টক এক্সচেঞ্জটির মুনাফায়ও টান লেগেছে। কারণ, স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়মিত আয়ের একটি বড় উৎস লেনদেনের ওপর থেকে কমিশন আয়। লেনদেন কমে গেলে স্টক এক্সচেঞ্জের আয়ও তাই কমে যায়।
সিএসইর আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ গত জুনে শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ লেনদেনের পরিমাণ কমে নেমে এসেছে ২৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। এ কারণে লেনদেন বাবদ আয়ও অর্ধেক কমে গেছে স্টক এক্সচেঞ্জটির। ২০২১-২২ অর্থবছরে লেনদেনের কমিশন বাবদ স্টক এক্সচেঞ্জটির আয় ছিল ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে সাড়ে চার কোটি টাকায় নেমেছে।
গত সোমবার সিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। পাশাপাশি ওই সভা থেকে গত অর্থবছরের জন্য লভ্যাংশেরও ঘোষণা দেওয়া হয়। সর্বশেষ আর্থিক প্রতিবেদন থেকে সিএসইর আয় ও মুনাফা–সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে স্টক এক্সচেঞ্জটির কর–পরবর্তী মুনাফা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪ কোটি টাকায়। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৩৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরে কোম্পানিটির মুনাফা ১২ শতাংশ বা প্রায় ৫ কোটি টাকা কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসে। গত অর্থবছর শেষে ইপিএস কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪ পয়সায়। আগের অর্থবছরে ইপিএস ছিল ৬১ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরে স্টক এক্সচেঞ্জটির শেয়ারপ্রতি আয় ৭ পয়সা কমে গেছে।
সিএসই–সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত লেনদেন থেকে আয় কমে যাওয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জটির মুনাফা কমেছে। আর লেনদেন থেকে আয় কমার বড় কারণ ছিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস। গত বছরের ২৮ জুলাই থেকে বাজারের পতন ঠেকাতে নতুন করে ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। তাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রায় পুরোটা সময় বহাল ছিল এ ফ্লোর প্রাইস। ফলে তালিকাভুক্ত বেশির ভাগ কোম্পানিরই লেনদেন বন্ধ ছিল। কারণ, ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা শেয়ারের তেমন কোনো হাতবদল হয়নি।
জানতে চাইলে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, গত অর্থবছরে লেনদেন ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে মাশুল আদায় কমে যাওয়ায় মুনাফা কমে গেছে।
শেয়ারবাজারে শেয়ারের যত বেশি হাতবদল হয়, লেনদেন তত বাড়ে। আর লেনদেন বাড়লে তাতে আয়ও বাড়ে স্টক এক্সচেঞ্জের। বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ দশমিক ৩০ পয়সা করে লেনদেনের কমিশন নেয়। এ ছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের নিয়মিত আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির মাশুল। প্রতি বছর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে এ মাশুল আদায় করা হয়। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে তালিকাভুক্তি মাশুল বাবদ সিএসইর আয় হয়েছিল প্রায় ২৪ কোটি টাকা। এর বাইরে সিএসইর আয়ের বড় একটি উৎস ব্যাংকে জমা টাকার বিপরীতে সুদ আয়।
সিএসইর আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থাটি ব্যাংকে জমা অর্থের বিপরীতে সুদ বাবদ আয় করেছে প্রায় ৩৪ কোটি টাকা। আগের বছর এ বাবদ আয় ছিল সাড়ে ২৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সুদ বাবদ আয় সাড়ে ৫ কোটি টাকা বেড়েছে। সুদ আয় বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সিএসইর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকে সুদের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বাবদ আয় বেড়েছে। পাশাপাশি সংস্থাটি কয়েকটি বন্ডে বিনিয়োগ করেও ভালো মুনাফা করেছে। তাতেই মূলত সুদ আয় বেড়েছে স্টক এক্সচেঞ্জটির।
মুনাফা কমলেও লভ্যাংশে কোনো পরিবর্তন হয়নি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সিএসই ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর আগের অর্থবছরেও প্রতিষ্ঠানটি তার শেয়ারধারীদের ৫ শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছিল। বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটির যে শেয়ার রয়েছে তাতে ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিতে খরচ হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা।