শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করতে চায় সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

সালেহউদ্দিন আহমেদফাইল ছবি

শেয়ারবাজারে কিছু সংস্কার হচ্ছে। সব সংস্কারেরই কিছু যন্ত্রণা থাকে। তাই শেয়ারবাজারের সংস্কার কার্যক্রমেরও কিছু যন্ত্রণা সাময়িকভাবে সইতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান হচ্ছে শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করা। ব্যাংকের ঋণনির্ভর অর্থনীতি টেকসই কোনো অর্থনীতি নয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শিল্প গড়লে অনেক সময় টাকা ফেরত না দিলেও চলে। এ কারণে আমাদের দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বেশি।

শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথাগুলো বলেন। রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই ভবনে আজ মঙ্গলবার সকালে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের শেয়ারবাজারের গভীরতা অনেক কম। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এই বাজারে আসতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এসব কোম্পানির মালিকেরা ভাবেন, ছেলে হবে পরিচালক, বউ চেয়ারম্যান। ব্যবসায় যা মুনাফা হবে, তা নিজেরা ভোগ করবেন। শেয়ারবাজারে আসা মানেই ভালো ব্যবস্থাপনা, করপোরেট সুশাসন ইত্যাদি উন্নত হওয়া। কিন্তু অনেকে এসব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না। তাই তাঁরা বাজারে আসতে আগ্রহী নন। কিন্তু সময় এসেছে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর। এ জন্য ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। আর তার জন্য করের সুবিধাসহ সরকারি যেসব নীতি–সহায়তা দরকার, সেসব বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। কিছু সরকারি কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও বড় সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে দলগতভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করার উদ্যোগেরও ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে সমন্বয় বা যোগাযোগ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি দলগতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।’

শেয়ারবাজারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডিএসইসহ শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ভারতের শেয়ারবাজারে দেশটির প্রবাসীদের বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও অনেকের বিনিয়োগের সামর্থ্য রয়েছে। তাঁদের বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। আর এ জন্য বাজারকে আকর্ষণীয় করতে হবে।’

এ সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেই সবাই খুশি হন। কিন্তু বাজার যখন বেশি ওপরের দিকে যায়, তখন একটু সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল নীতির কারণেও শেয়ারবাজারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ব্যাংকগুলো বাজারে বেশি বিনিয়োগ করায় বাজার অনেক ওপরে উঠে গিয়েছিল। এরপর হঠাৎ ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। এ সময় বিএসইসির কমিশনার, শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ডিএসইর পরিচালক ও ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।