নির্বাচনের আগে ব্রোকারেজ হাউস পরিচালনা আইন সংশোধনে আপত্তি
শেয়ারবাজারে স্টক ব্রোকার, ডিলার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি বিধিমালা সংশোধনে আরও সময় চান ব্রোকারেজ হাউসের মালিকেরা। তাঁরা আগামী নির্বাচনের পর এ বিধিমালা বা আইন চূড়ান্ত করার পক্ষে। আজ বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার করা এ–সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালার ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্রোকারেজ হাউসের মালিকেরা এ মতামত তুলে ধরেন।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারের সম্মেলনকক্ষে এটি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা খসড়া বিধিমালার ওপর তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, নতুন এ বিধিমালা চূড়ান্ত করার বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব উঠে আসে ডিবিএর সভায়।
প্রসঙ্গত, ব্রোকারেজ হাউসগুলো স্টক ডিলারের ভূমিকাও পালন করে থাকে। আর ব্রোকারেজ হাউসের পক্ষে যাঁরা বিনিয়োগকারীদের লেনদেন করেন, তাঁদের বলা হয় অনুমোদিত প্রতিনিধি।
ডিবিএর সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনটির সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও। এরপর সংশোধিত খসড়া বিধিমালার বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য দেন ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান, বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী, ডিবিএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাজেদুল ইসলাম ও সহসভাপতি মো. সাইফ উদ্দিন, ডিএসইর সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক পরিচালক সাইফুল ইসলাম, ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রহমত পাশা, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান প্রমুখ।
সভার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘সংশোধিত খসড়া বিধিমালার ওপর আমরা আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। আইনটি ২০ বছর পর হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এ সময়ে প্রযুক্তির অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তাই আইনে প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তাও রয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছি এত দিন পর যেহেতু আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাই সেটি হতে হবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়।
আহসানুল ইসলাম বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি যেমন আইনে নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তেমনি সহজে ব্যবসা বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেসের বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা নির্বাচনের পর সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিধিমালাটি চূড়ান্ত করার পক্ষে মত দিয়েছি।’
ডিবিএর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আজকের এ আলোচনার পর সংগঠনের পক্ষ থেকে বিধিমালার বিষয়ে মতামত তুলে ধরতে সময় বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) আবেদন করা হবে।
এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনের পর এ বিষয়ে অধিকতর আলাপ–আলোচনা করে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আমরা বিএসইসির কাছে আবেদন করব। নির্বাচনের পর আমরা এ বিষয়ে আমাদের মতামতও তুলে ধরব।’
বিএসইসির সংশোধিত খসড়া বিধিমালায় বেশ কিছু নতুন ধারা সংযোজন করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউসে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন সাপেক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ, বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ব্রোকারেজ হাউসে একজন পরিচালক নিয়োগ, পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি, পরিশোধিত মূলধনের এক–তৃতীয়াংশ বিনিয়োগে রাখা, ব্রোকারেজ হাউসের মালিকানার শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন গ্রহণ ইত্যাদি।
নতুন সংযোজিত ধারাগুলোর বেশির ভাগের বিষয়েই আপত্তি রয়েছে ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের। তাঁদের মতে, এসব ধারা আইনে সংযোজিত হলে তাতে ব্রোকারেজ হাউস পরিচালনা ও ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে।