বাণিজ্যিক জায়গার জন্য গুলশানের চাহিদা বেশি
ঢাকায় বিত্তবানদের একটা বড় অংশ বসবাস করেন গুলশানে। সে জন্য প্রতিবছর এই অভিজাত এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, অফিস বা কার্যালয়ের জন্য অর্থাৎ বাণিজ্যিক জায়গার (কমার্শিয়াল স্পেস) চাহিদাও বাড়ছে গুলশানে।
দেশের আবাসন কোম্পানিগুলো ২০১০ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৩ বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোট ২ কোটি ৮ লাখ বর্গফুট বাণিজ্যিক জায়গা নির্মাণ করেছে। জানা গেছে, আগামী দুই বছরে আরও ৩০ লাখ বর্গফুট আয়তনের অফিস স্পেস সরবরাহ করবে কোম্পানিগুলো।
গত ১৩ বছরে সবচেয়ে বেশি অফিস স্পেস নির্মিত হয়েছে গুলশানে, যা আয়তনে ২৯ লাখ ২৪ হাজার বর্গফুট। এর পেছনেই রয়েছে তেজগাঁও এলাকা, যেখানে তৈরি হয়েছে ২৭ লাখ ৫৭ হাজার বর্গফুট। উল্লেখযোগ্য অন্য এলাকাগুলোর মধ্যে উত্তরায় ২৬ লাখ ৩১ হাজার, ধানমন্ডিতে ১৯ লাখ ২১ হাজার, বসুন্ধরায় ১৬ লাখ ৭০ হাজার ও বনানীতে ১৪ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট আয়তনের বাণিজ্যিক জায়গা নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়া পরীবাগে ৩ লাখ ৫৫ হাজার, মহাখালীতে ৩ লাখ ৩৪ হাজার, মিরপুরে ৩ লাখ ৩৪ হাজার, গেন্ডারিয়ায় ৩ লাখ ১৩ হাজার, গুলিস্তানে ২ লাখ ৭১ হাজার, রামপুরায় আড়াই লাখ ও বনশ্রীতে ১ লাখ ৪৬ হাজার বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা নির্মিত হয়েছে।
বৈশ্বিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (আরআইইউ) এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের আবাসন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। সংগঠনটির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে বাণিজ্যিক জায়গা সরবরাহ ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমেছে। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি গত বছর সব মিলিয়ে ৮ লাখ ২৮ হাজার বর্গফুট আয়তনের বাণিজ্যিক জায়গা সরবরাহ করেছে।
ব্যবসায়ীরা আগের মতো বাসাবাড়িতে অফিস করতে চান না। কারণ, বর্তমানে কমপ্লায়েন্সের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া বাসাবাড়িতে ব্যবসায়িক কার্যালয় স্থাপনে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায় না। এসব কারণে অ্যাপার্টমেন্টের মতোই অফিস স্পেসের চাহিদা বাড়ছে।
আরআইইউর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭ শতাংশ অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে গুলশানে, যা সংখ্যায় ২২ হাজার ৮৭৬। এরপরই ধানমন্ডির অবস্থান, যেখানে তৈরি হয়েছে ১৭ হাজার ৪৯৪টি অ্যাপার্টমেন্ট। অন্য এলাকাগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরে ১৪ হাজার ৮০২, মিরপুরে ১২ হাজার ১১১, বনানীতে ৮ হাজার ৭৪ এবং উত্তরায় ৬ হাজার ৭২৮টি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে।
আবার অফিস স্পেসের প্রসঙ্গে ফেরা যাক। গুলশানে বাণিজ্যিক জায়গার সরবরাহ বেশি হলেও বর্গফুটপ্রতি ভাড়া বেশি ধানমন্ডিতে। গত বছর এই এলাকায় প্রতি বর্গফুটের মাসিক গড় ভাড়া ছিল ১ ডলার ২০ সেন্ট। ডলারের বর্তমান দামে স্থানীয় মুদ্রায় ধানমন্ডিতে এখন প্রতি বর্গফুটের ভাড়া দাঁড়ায় ১২৮ টাকা।
এ ছাড়া প্রতি বর্গফুট বাণিজ্যিক জায়গার ভাড়া বসুন্ধরায় ১ ডলার ১০ সেন্ট, বনানীতে ১ ডলার ৪ সেন্ট, মোহাম্মদপুরে ১ ডলার ৩ সেন্ট, তেজগাঁওয়ে ১ ডলার, দিলকুশায় ৮৫ সেন্ট, গুলশান ও মতিঝিলে ৭২ সেন্ট, পরীবাগে ৬৯ সেন্ট, মহাখালীতে ৬৭ সেন্ট এবং মিরপুরে ৫৫ সেন্ট। সবচেয়ে কম ভাড়া দক্ষিণখানে, ২৪ সেন্ট। যদিও ভাড়ার এই হার গড় হিসাব। ভবনের অবস্থান ও কোম্পানিভেদে অফিস স্পেসের ভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে।
আরআইইউর প্রতিবেদনমতে, গত ১৩ বছরে খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য ২৫ লাখ ২১ হাজার বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা সরবরাহ করেছে আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর ৪৬ হাজার ৫০০ বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা নির্মিত হয়েছে। চলতি বছর দেড় লাখ এবং আগামী বছর ২ লাখ বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা সরবরাহ করবে আবাসন কোম্পানিগুলো। উন্নত মানের বিপণিবিতানগুলোর জায়গাও এই হিসাবে নেওয়া হয়েছে।
খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫৪ হাজার বর্গফুটের বাণিজ্যিক জায়গা নির্মিত হয়েছে উত্তরায়। এ ছাড়া বারিধারায় ৩ লাখ, শান্তিনগরে পৌনে ৩ লাখ, কুড়িলে ৪৫ হাজার ও বসুন্ধরায় ৫০ হাজার বর্গফুট বাণিজ্যিক জায়গা নির্মিত হয়েছে।
উত্তরায় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য বাণিজ্যিক জায়গা সরবরাহ বেশি হলেও ভাড়া বেশি গুলশানে। প্রতি বর্গফুটের মাসিক ভাড়া ৩ ডলার ৩৩ সেন্ট। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে ৩ ডলার ১৫ সেন্ট, কারওয়ান বাজারে ২ ডলার ৮৩ সেন্ট, তেজগাঁওয়ে ২ ডলার ২৯ সেন্ট এবং বনানীতে ২ ডলার ২৬ সেন্ট।
জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ীরা আগের মতো বাসাবাড়িতে অফিস করতে চান না। কারণ, বর্তমানে কমপ্লায়েন্সের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া বাসাবাড়িতে ব্যবসায়িক কার্যালয় স্থাপনে ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায় না। এসব কারণে অ্যাপার্টমেন্টের মতোই অফিস স্পেসের চাহিদা বাড়ছে।
গুলশানে অফিসের জন্য বাণিজ্যিক জায়গার চাহিদা বেশি হওয়ার কারণ কী জিজ্ঞেস করলে রিহ্যাবের সভাপতি বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তাদের একটি অংশ গুলশান, বনানী ও বারিধারায় বসবাস করেন। যানজটের কারণে সময় বাঁচাতে তাঁরা বাসস্থানের আশপাশেই অফিস স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তা ছাড়া গুলশানে গত কয়েক বছরে অনেকগুলো আধুনিক বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মিত হয়েছে। সে কারণে গুলশানে অফিসের সংখ্যা বাড়ছে। আবার গুলশানের খুব কাছে হওয়ায় তেজগাঁওয়েও অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যালয় স্থাপন করছে।