২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

কমতে শুরু করেছে তরুণ জনগোষ্ঠী

বয়স্ক মানুষ বৃদ্ধির সঙ্গে দেশে ৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মানুষের হার কমেছে। তবে এখনো দেশের ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ কর্মক্ষম।

বাংলাদেশ এখন জনমিতিক সুবিধার কাল অতিক্রম করছে। অর্থাৎ দেশের কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা নির্ভরশীল মানুষের চেয়ে বেশি। জনমিতির এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অনেক দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেই সুবিধা কতটা কাজে লাগাতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে মোট জনগোষ্ঠীর তুলনায় তরুণ ও কর্মক্ষম মানুষের হার গত পাঁচ বছরে কিছুটা কমেছে, যদিও তা উদ্বেগজনক নয়। প্রকৃতির নিয়মে জনমিতির সুবিধা চিরকাল থাকে না; বাংলাদেশও চিরকাল তা পাবে না। এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এই সুবিধা কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আর বিলম্ব করা ঠিক হবে না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে মোট জনগোষ্ঠীর তুলনায় তরুণ ও কর্মক্ষম মানুষের হার গত পাঁচ বছরে কিছুটা কমেছে, যদিও তা উদ্বেগজনক নয়।

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলেন, একটি দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী) যদি বেড়ে যায় এবং নির্ভরশীল জনসংখ্যা (শূন্য থেকে ১৪ ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সী) কমে যায়, তাহলে জনমিতির সুবিধা দেশটির অনুকূলে থাকে।

গত রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর হার ছিল ৬৫ দশমিক ০৮ শতাংশ; ২০১৯ সালে যা ছিল ৬৬ দশমিক ১৯ শতাংশ। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরে দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর হার ১ দশমিক ১১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালে দেশে ৬৫ বছরের বেশি বয়সের জনগোষ্ঠী ছিল মোট জনসংখ্যার ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ; ২০১৯ সালে এ হার ছিল ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। সেই হিসাবে বয়স্ক মানুষের হার বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট।

গত রোববার প্রকাশিত বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে দেশে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর হার ছিল ৬৫ দশমিক ০৮ শতাংশ; ২০১৯ সালে যা ছিল ৬৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।

জনমিতির সুবিধা

বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ এখনো কর্মক্ষম। ফলে জনমিতির সুবিধা কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে অনুকূল সময় বিরাজ করছে। তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, জনসংখ্যার বেশির ভাগ মানুষ কর্মক্ষম হলেই যে একটি দেশ জনমিতির লভ্যাংশ নিতে পারবে, তা নয়। এ সুবিধা নিতে হলে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। গত শতকের ষাট ও নব্বইয়ের দশকে হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতির সুবিধা নিয়ে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক উন্নয়ন করতে পেরেছে।

এ বিষয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনমিতির সুবিধা যত দিন পাওয়ার কথা ছিল, তার মধ্যে অনেকটা সময় ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। বয়স্ক জনগোষ্ঠী আগামী ১৫-২০ বছরে আরও বাড়বে। এখন যে তরুণ জনগোষ্ঠী আছে, তাদের কাজে লাগাতে মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণ ঘটাতে যাচ্ছে; এরপর আমরা বাজারসুবিধা হারাব এবং প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হব, সেই পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের তরুণ জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দ দিয়ে এই অভীষ্ট অর্জন করা সম্ভব নয়। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর এক–তৃতীয়াংশ যদি শিক্ষা প্রশিক্ষণ বা কর্মসংস্থানে না থাকে, তাহলে আমরা কীভাবে জনমিতির এই সুবিধা কাজে লাগাব। শিক্ষা খাতে বরাদ্দ অন্তত শতভাগ বাড়াতে হবে।

জনমিতির সুবিধা যত দিন পাওয়ার কথা ছিল, তার মধ্যে অনেকটা সময় ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে। বয়স্ক জনগোষ্ঠী আগামী ১৫-২০ বছরে আরও বাড়বে। এখন যে তরুণ জনগোষ্ঠী আছে, তাদের কাজে লাগাতে মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
মোস্তাফিজুর রহমান, সম্মাননীয় ফেলো, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)

বেড়েছে বয়স্ক মানুষ

বিবিএসের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে শুধু ২০২২ সাল ছাড়া প্রতিবছরই ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হার বেড়েছে। ২০১৯ সালে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী ছিল ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, ২০২১ সালে ছিল ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশে। সর্বশেষ গত বছর এক ধাক্কায় এই হার অনেকটা বেড়ে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশে উঠেছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫০ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর হারও বেড়েছে। ২০১৯ সালে দেশে ৫০ থেকে ৬৫ বছর বয়সের মানুষের হার ছিল মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা বেড়ে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশে উঠেছে। এ কারণে দেশে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর হারও বেড়েছে। ২০১৯ সালে নির্ভরশীল প্রবীণ ছিল মোট জনগোষ্ঠীর ৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা বেড়ে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে দেশের মানুষের গড় বয়সও বেড়েছে। ২০১৯ সালে গড় বয়স ছিল ২৮ দশমিক ৯৬ বছর; ২০২৩ সালে তা ২৯ দশমিক ২৬ বছরে উন্নীত হয়েছে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীর গড় বয়স বেশি। ২০২৩ সালে দেশের নারীদের গড় বয়স ছিল ২৯ দশমিক ৪২ বছর আর পুরুষের ২৯ দশমিক শূন্য ৯ বছর।