কৃষি বিভাগের তথ্য
‘পেঁয়াজের ভান্ডারে’ এখন দুই লাখ টন মজুত আছে
বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আমদানি শুরুর সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ না থাকায় কৃষকেরা মূল্যবৃদ্ধির আশায় মোকামে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন।
দেশে ‘পেঁয়াজের ভান্ডার’খ্যাত পাবনার সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার হাটগুলোতে গত রোববার প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫৮ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক দিন পর সোমবার পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ১০ টাকার মতো বেড়ে ৬৭ থেকে ৭৩ টাকায় উঠে যায়। তবে ‘দাম না কমলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে’ বলে বাণিজ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেওয়ায় পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করে। কিন্তু দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে।
সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা যথাক্রমে রাফিউল ইসলাম ও সঞ্জীব কুমার গোস্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল বুধবার পর্যন্ত পাবনায় কৃষকদের কাছে ২ লাখ ৬ হাজার টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। এর মধ্যে সুজানগরে ১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টন এবং সাঁথিয়ায় ৭৮ হাজার ৫০০ টন। এই পেঁয়াজে দেশের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হবে জানিয়ে দুই কর্মকর্তা ভোক্তাদের শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্যদিকে আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা হলো, এখন আর বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ মজুত নেই। তাঁদের মতে, এবার পেঁয়াজের ফলন কম হয়েছে। অধিকাংশ প্রান্তিক চাষির কাছে পেঁয়াজ নেই। অবস্থাপন্ন কৃষকদের কাছে পেঁয়াজ থাকলেও তা পেঁয়াজের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। গতকাল বুধবার জেলার বিভিন্ন হাট–বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের সরবরাহ কম। পাইকারিতে ৬৩ থেকে ৬৮ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
* পাইকারিতে কেজি ৬৩–৬৮ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
* সুজানগরে ১২৭,৫০০ টন ও সাঁথিয়ায় ৭৮,৫০০ টন মজুত আছে।
স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা হলো সুজানগর। এর পরেই সাঁথিয়ার অবস্থান। সুজানগর উপজেলায় এবারে ১৮ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। আর পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ১৬০ টন। সাঁথিয়া উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার টন পেঁয়াজ।
মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে গড়ে খরচ পড়েছে ৩০ টাকা। অথচ মৌসুমে তাঁদের পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি। এতে প্রান্তিক চাষিদের লোকসান হয়েছে। তবে সচ্ছল কৃষকেরা পুরো পেঁয়াজ বিক্রি করেননি। এখন তাঁরা বেশি দামে বিক্রি করে লাভ তুলছেন।
সরেজমিনে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাণিজ্যমন্ত্রী সম্প্রতি পেঁয়াজ আমদানির হুঁশিয়ারি দেওয়ায় কৃষকেরা বেশি করে পেঁয়াজ হাটে আনতে শুরু করেছিলেন। তাতে দাম কিছুটা কমেছিল। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আমদানি শুরুর সুনির্দিষ্ট দিন–তারিখ উল্লেখ না থাকায় কৃষকেরা মূল্যবৃদ্ধির আশায় মোকামে পেঁয়াজ আনা কমিয়ে দিয়েছেন।
ব্যবসায়ী ও আড়তদারেরা জানান, দু-তিন সপ্তাহ আগে থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এর মধ্যে ১৬ মে পাইকারিতে সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিতে এক দিন পরই আবার দাম কমতে শুরু করে। একপর্যায়ে পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম ৫৫ টাকায় নেমে যায়। কিন্তু এখন আবার দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়ে উঠছে।
সাঁথিয়ার করমজা হাটের আড়তদার মুন্নাফ প্রামাণিক ও বোয়ালমারি হাটের আড়তদার রাজা মিয়া জানান, বেশির ভাগ মজুতদার তাঁদের পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন সচ্ছল ও অবস্থাপন্ন কৃষকদের ঘরেই কেবল পেঁয়াজ আছে। তাঁরা দাম আরও বাড়বে, এমন আশায় পেঁয়াজ ধরে রেখেছেন। আর এই পেঁয়াজ চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে আবার দাম কমে যাবে বলে দুই আড়তদার মনে করেন।
সাঁথিয়া উপজেলার বড়গ্রামের কৃষক হবিবুর রহমান বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করছিল্যাম। কিন্তু এবার ভালো ফলন হয় নাই। মোট ফলনের চার ভাগের তিন ভাগই বেইচ্যা দিছি। এক ভাগ মোটে আছে।’
সুজানগর ও সাঁথিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা যথাক্রমে রাফিউল ইসলাম ও সঞ্জীব কুমার গোস্বামী অবশ্য আলাদাভাবে জানান, এবার অল্প কিছু এলাকায় ফলন কিছুটা কম হলেও সামগ্রিকভাবে ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকের ঘরে পেঁয়াজের মজুতও বেশ ভালো আছে, যা দিয়ে দেশের চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হতে পারে। তাই পেঁয়াজ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, পেঁয়াজের আবাদ করে গত দুই বছর কৃষকেরা লোকসান দিয়েছেন। এবার দাম ভালো থাকায় আগামী মৌসুমে তাঁরা বেশি জমিতে পেঁয়াজ চাষে উৎসাহিত হবেন।