কুষ্টিয়া ও নওগাঁর মোকামে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা
বাজারে চালের দাম বেড়ে গেছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে সব ধরনের চিকন ও মোটা চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। আর খুচরায় তা বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির ঈদের পর থেকেই বাজারে ধান-চালের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহে বিভিন্ন চালের মোকাম ও মিলগেট থেকে বেশি দামে চাল কিনছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। আর চালকলের মালিকদের দাবি, ধানের দাম বাড়ায় তাঁরা চালের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। এ অবস্থায় ধানের বাজারে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
অবৈধ মজুতদারেরা সিন্ডিকেট করে ধান মজুত করে রেখেছেন। ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক।ওমর ফারুক, সভাপতি, বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়া শাখা
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে তিন মাস ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর রয়েছে। সর্বশেষ গত জুনে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ। বর্তমানে বাজারে সবজি, পেঁয়াজ, মরিচের মতো নিত্যপণ্যের দাম বেশ চড়া। অন্যান্য পণ্যও অনেকটা উচ্চ মূল্যে স্থির হয়ে আছে। ফলে নতুন করে চালের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। এ অবস্থায় ধান-চালের বাজারে নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
দেশের অন্যতম বড় দুই চালের মোকাম কুষ্টিয়া ও নওগাঁ এবং রাজধানী ঢাকার একাধিক পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য জানা গেছে। সব বাজারেই চালের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
প্রথম আলোর নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, এই জেলার বিভিন্ন মিলগেটে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা চালের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এই দরেই পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে। যেমন জেলা শহরের আলুপট্টি এলাকার চালের আড়তগুলোতে সপ্তাহ দুই আগে মানভেদে প্রতি বস্তা জিরাশাইল চালের দাম ছিল ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা। গতকাল বুধবার সেই চাল ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে অন্যান্য চালের দামও বেড়েছে। কুষ্টিয়ার খাজানগর মোকামে গতকাল সকালে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৪ টাকা ও কাজললতা ৫৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ১৫ দিন আগে মিনিকেট ৬১ টাকা ও কাজললতার দাম ৫৬ টাকা ছিল।
দেশের অন্যতম বড় দুই চালের মোকাম কুষ্টিয়া ও নওগাঁ এবং রাজধানী ঢাকার একাধিক পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে চালের মূল্যবৃদ্ধির তথ্য জানা গেছে। সব বাজারেই চালের মূল্যবৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এ দিকে পাইকারিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে খুচরাতেও। সরেজমিন দেখা গেছে, খুচরা বাজারে সব ধরনের চিকন ও মোটা চালের দামও কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। খুচরা বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়, যা দিন দশেক আগে ছিল ৪৬-৪৮ টাকা। তবে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে বাসমতী চালের দাম। গতকাল পর্যন্ত খুচরা বাজারে বাসমতি চাল বিক্রি হয়েছে ৮৬-৯০ টাকা কেজি, যা এক মাস আগে ছিল ৮০ টাকা।
ভাতের চাল হিসেবে জিরা ও কাটারি চালের চাহিদা সারা বছর থাকে। বোরো মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে এ জাতের খুব একটা চাষ হয় না। এখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে জিরা ও কাটারি জাতের ধান কেনার প্রতিযোগিতা থাকায় ধানের দাম বেড়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন
বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কুষ্টিয়া শাখার সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ঈদের পর ধানের দাম প্রতি মণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও কৃষকের কাছে ধান নেই, মিলারের কাছেও নেই। অবৈধ মজুতদারেরা সিন্ডিকেট করে ধান মজুত করে রেখেছেন। ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম বাড়বে—এটাই স্বাভাবিক।
তবে ধানের মূল্যবৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছেন না নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ভাতের চাল হিসেবে জিরা ও কাটারি চালের চাহিদা সারা বছর থাকে। বোরো মৌসুম ছাড়া অন্য সময়ে এ জাতের খুব একটা চাষ হয় না। এখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে জিরা ও কাটারি জাতের ধান কেনার প্রতিযোগিতা থাকায় ধানের দাম বেড়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।