মার্ক জাকারবার্গ–ইলন মাস্কের মধ্যে সব বিষয়ে বৈরিতা, দুজনে একমত শুধু এক বিষয়ে

মার্ক জাকারবার্গ ও ইলন মাস্করয়টার্স

ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্ক জাকারবার্গ ও খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সের মালিক ইলন মাস্কের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা রয়েছে। কোন বিষয়ে তাঁরা দুজন একমত হয়েছেন, তা বিরল ঘটনা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে তাঁদের দুই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কীভাবে পরিচালনা করা হবে, সবকিছুতেই তাঁদের মধ্যে প্রবল ভিন্নমত রয়েছে।

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাকারবার্গ ও মাস্কের এই বৈরিতা এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে, এমনকি তাঁদের মধ্যে শারীরিক সংঘাত হওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছিল। তবে প্রযুক্তি খাতের এই দুই বিলিয়নিয়ার বা শতকোটিপতি একটি বিষয়ে একমত: তাঁদের অভিন্ন প্রতিযোগী ওপেনএআই-কে অবশ্যই অলাভজনক থাকার নীতি মেনে ব্যবসা করতে হবে।

গত শুক্রবার জাকারবার্গের কোম্পানি মেটা ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলছে, ওপেনএআই যাতে মুনাফার লক্ষ্যে ব্যবসা না করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। স্যাম অল্টম্যানের এই কোম্পানি তার ‘অলাভজনক’ মর্যাদার ‘সুযোগ নিয়ে’ শত শত কোটি ডলার অর্থ উত্তোলন করছে বলে মেটা অভিযোগ এনেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল রবিন বনটার কাছে লেখা এক চিঠিতে মেটা বলেছে, ‘যেসব সুবিধা ব্যবহার করে ওপনএআই আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে, তা বহাল রেখে তারা তাদের মর্যাদার পরিবর্তন করতে চায়। এটা ভুল। ওপেনএআই দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সুবিধা নিয়ে যে সম্পদ তৈরি করেছে, আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে তা যেন ব্যক্তিগত সুবিধার লক্ষ্যে ব্যবহার না করা যায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির দৌড়ে মেটার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো ওপেনএআই।

মেটার এই অবস্থানের মধ্য দিয়ে জাকারবার্গ মূলত মাস্কের পক্ষ নিলেন। টেসলার এই মালিক এরই মধ্যে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছেন। তাঁর লক্ষ্য, ওপেনএআই যাতে মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবসা না করতে পারে।

ওপেনএআইয়ের ১১ প্রতিষ্ঠাতার একজন ছিলেন ইলন মাস্ক। তবে কোম্পানিটির শুরুর দিকেই তিনি সরে দাঁড়ান। গত মাসে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো উদ্যোগ নেন, ওপেনএআই যাতে মুনাফা করার লক্ষ্যে পরিচালিত না হয়। আদালতের কাছে তিনি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে আবেদন জানান।

এআই স্টার্টআপ ওপেনএআইয়ের সবচেয়ে বড় করপোরেট বিনিয়োগকারী মাইক্রোসফট। এই দুই কোম্পানি মিলে ‘মুনাফার লক্ষ্যে একচেটিয়া ব্যবসা’ তৈরি করার জন্য কাজ করছে বলে মাস্কের নিষেধাজ্ঞার আবেদনে যুক্তি দেওয়া হয়। তাদের প্রতিযোগিতাবিরোধী আচরণ এক্সএআই-কে লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়। এক্সএআই হলো মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক কোম্পানি।

ওপেনএআই অবশ্য এসব অভিযোগের জবাব দিয়েছে। শুক্রবার এটি একটি ব্লগ পোস্ট প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল ‘ওপেনএআই মুনাফা করুক তা ইলন মাস্ক চেয়েছিলেন’। ওই পোস্টের সঙ্গে বেশ কিছু ই–মেইল ও বার্তা প্রকাশ করা হয়, যা মাস্ক অন্য সহপ্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে বিনিময় করেছিলেন। এসব সহপ্রতিষ্ঠাতার একজন ছিলেন অল্টম্যান নিজে।

যেসব ই–মেইল ও বার্তা প্রকাশ করা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে পুরোনোটি ২০১৫ সালের নভেম্বরের। এর এক মাস পরে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।

একটি মেইলে স্যাম অল্টম্যান ডেলাওয়ারভিত্তিক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তাব করেছিলেন। তবে এর জবাবে ইলন মাস্ক বলেন, ‘একই সঙ্গে এই কাঠামো সন্তোষজনক মনে হচ্ছে না।’

মাস্ক ২০১৮ সালে ওপেনএআই ছেড়ে চলে যান। অংশত এর কারণ, তিনি মনে করতেন যে ওপেনএআইয়ের ‘সফল হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য’। মার্চে প্রকাশিত একটি ব্লগে এ কথা জানানো হয়েছিল। মাস্কের মতে, ওপেনএআইয়ের আদি মিশন ছিল এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ভাবন করা, যা নিরাপদ ও মানবজাতির কল্যাণ বয়ে আনবে। তবে এই মিশন থেকে ওপেনএআই সরে এসেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

অলাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠার এক দশক পর ওপেনএআই এখন একটি মুনাফার লক্ষ্যে পরিচালিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেদের রূপান্তরিত করতে চাইছে, যাতে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আরও বেশি অর্থ পাওয়া যায়। গত অক্টোবরে কোম্পানিটি ৬৬০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের ঘোষণা দেয়। ফলে কোম্পানিটির মূল্যমান দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে।

তবে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত হলো যে ওপেনএআই দুই বছরের মধ্যে মুনাফার লক্ষ্যে পরিচালিত হবে।

মেটা জানিয়েছে, চলতি বছরে তারা মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত অবকাঠামোতে ৩ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে। মাস্কের এক্সএআই গত মাসে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে যে তারা ৫০০ কোটি ডলারের তহবিল পেয়েছে।

এসব বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মাস্ক এবং মেটা ও ওপেনএআইয়ের মুখপত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সাড়া দেয়নি।