বনানীর যে দোকানে এক পাঞ্জাবির দাম ৪ লাখ টাকা
রাজধানীর অন্যতম অভিজাত বুটিকের ব্র্যান্ড হাউস অব আহমেদ। সেখানে ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে সাত হাজার থেকে চার লাখ টাকায়। দামি কাপড়ের ওপর জারদোসি ও এমব্রয়ডারির নিখুঁত কাজ করা চার লাখ টাকা দামের একটি পাঞ্জাবি তৈরিতে সময় লাগে কয়েক মাস। তবে এই পাঞ্জাবি কিনতে একটু আগেভাগেই ক্রয়াদেশ দিতে হবে। বনানীর ১২ নম্বর সড়কের সিবিএল ডেলভিস্টা ভবনের ষষ্ঠ ও অষ্টম তলাজুড়ে এ ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্র।
হাউস অব আহমেদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিজাইনার আহমেদ তুহিন রেজা প্রথম আলোকে বলেন, আভিজাত্য ও রুচিশীল নকশার পাশাপাশি উন্নত মানের পোশাক তৈরির মাধ্যমে দেশের মানুষের রুচি পরিবর্তনের চেষ্টা হিসেবে এই ব্র্যান্ড গড়ে তুলেছেন। চার লাখ টাকা দামের একেকটি পাঞ্জাবি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ কারিগর দিয়ে হাতে তৈরি করা হয়, এ জন্য খরচও বেশি।
কারা এই দামি পাঞ্জাবির ক্রেতা—জানতে চাইলে আহমেদ তুহিন জানান, জুলাই আন্দোলনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা ছিলেন দামি পোশাকের অন্যতম ক্রেতা। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দামি পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য পোশাকের ৯৫ শতাংশ ক্রেতা আর নেই। তাই পাঞ্জাবিসহ অন্যান্য দামি পোশাকের বিক্রি কমে গেছে। এর বদলে এখন ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা দামের পোশাকের ক্রেতা বেশি। তিনি আরও জানান, তাঁর এই ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রের ক্রেতাদের বড় অংশই ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা।
কোথায় কী পাওয়া যায়
হাউস অব আহমেদ ছাড়াও বনানী ১১ ও ১২ নম্বর সড়ক এবং এর আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি অভিজাত পোশাকের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জে কে ফরেন, ফ্ল্যাগশিপ ১৩৮, হাউস অব বিন্দু, জুরহেইম, কোরাল ক্লসেট, পুমা ও আমারা। বনানী ছাড়াও রাজধানীর অভিজাত এলাকাখ্যাত গুলশানের পিংক সিটিতেও রয়েছে নামীদামি পোশাকের দোকান। এসব দোকানে ভারত, পাকিস্তানসহ দেশে তৈরি নানা ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। এর বাইরে গুলশানে রয়েছে ভিভা ক্রিয়েশনস ও ভাসাভির মতো দামি পোশাকের বিক্রয়কেন্দ্র। এসব দোকান ও বিক্রয়কেন্দ্রের বিক্রেতারা জানান, ঈদে বেশির ভাগ মানুষের চাহিদা থাকে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাকের। তাই ঈদকে সামনে রেখে তাঁরা ভারত ও পাকিস্তানের নানা ধরনের নামীদামি পোশাক সংগ্রহ করেছেন বিক্রির জন্য।
গত মঙ্গলবার মেয়েকে নিয়ে গুলশান পিংক সিটিতে ঈদের কেনাকাটা করতে আসেন তাসমিন নাহার। পেশায় তিনি শিক্ষিকা। নিজের ও মেয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়ে দুটি থ্রি–পিস কেনেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পিংক সিটিতে অনেক ধরনের পোশাক পাওয়া যায়। তাই পছন্দের পোশাকটি পাওয়া যায় সহজে। এ জন্য ঈদের কেনাকাটার জন্য এখানে এসেছেন। তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বাড়তি।
কোথায় দাম কত
বনানীর জে কে ফরেন নামের ব্র্যান্ডের দোকানে ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। মেয়েদের থ্রি–পিসের দাম ৩ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায়। জে কে ফরেন বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘আমাদের বিক্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন দামের পোশাক পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি চাহিদা ৫ থেকে ২০ টাকার পোশাকের।’
এ ছাড়া একই এলাকার হাউস অব বিন্দুতে বেশি পাওয়া যায় মেয়েদের নানা ধরনের পোশাক। তবে আগে থেকে ক্রয়াদেশ দিলে ছেলেদের পোশাকও বানিয়ে দেয় তারা। এই বিক্রয়কেন্দ্রে মেয়েদের থ্রি–পিস বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। নানা ধরনের পার্টি পোশাক বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৬ হাজার টাকায়। এই বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মিতু মনি বলেন, দেশের ক্রেতাদের পাশাপাশি বিদেশেও তাঁদের ক্রেতা রয়েছে। আমেরিকা ও ফ্রান্সের কিছু ক্রেতা তাঁদের পোশাক কেনেন। কুরিয়ারের মাধ্যমে এসব ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দেন তাঁরা।
বনানীর আরেক ব্র্যান্ড কোরাল ক্লসেটে শাড়ি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে এক লাখ টাকায়। এই বিক্রয়কেন্দ্রের স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার রুপো শামস্ জানান, দামকে প্রাধান্য না দিয়ে তাঁরা ক্রেতাদের রুচিকে প্রাধান্য দিয়ে পোশাকের নকশা করেন।
এদিকে গুলশানের অভিজাত বিক্রয়কেন্দ্র ভাসাভিতে ছেলেদের পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়। আর মেয়েদের থ্রি–পিসের দাম ৬ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এসব পোশাক ভারত থেকে এনে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি।
অভিজাত এলাকায় ব্যবসায় ভাটা
গুলশানের ভিভা ক্রিয়েশনস নামের বিক্রয়কেন্দ্রে ছেলেদের একেকটি পাঞ্জাবির দাম ৪ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া মেয়েদের শাড়ি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার থেকে সোয়া চার লাখ টাকায়। কাতান, সিল্ক, কাঞ্জিভরম, শিফন, জর্জেট, সুতি ও মসলিনজাতীয় শাড়ি পাওয়া যায় বিক্রয়কেন্দ্রটিতে। এই বিক্রয়কেন্দ্রের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি ৬০ শতাংশ কম। বর্তমান পরিস্থিতিতে দামি পোশাকের বিক্রি বেশি কমেছে। এর বিপরীতে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার পোশাকের বিক্রি বেড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে অন্যান্য বছরের তুলনায় উপহারের নানা পোশাক বিক্রিও কমেছে।
মঙ্গলবার ঈদের কেনাকাটার জন্য ভিভা ক্রিয়েশনসে আসেন মিরপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাহীনা আশরাফ। ভাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি কিনতে আসেন তিনি এই বিক্রয়কেন্দ্রে। আলাপকালে তিনি বলেন, এখানে নানা ডিজাইনের রুচিশীল পোশাক পাওয়া যায়। এ কারণে খুব সহজেই পছন্দের পোশাক কেনা যায়। ভাইয়ের জন্য এবার ৩২ হাজার টাকা দামের একটি পাঞ্জাবি কিনেছেন তিনি।
গুলশান ও বনানীর নামীদামি পোশাকের বিক্রয়কেন্দ্রের মালিক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অভিজাত এসব এলাকার ব্যবসায় কিছুটা ভাটা লেগেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে বিগত বছরগুলোতে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদেরা যেসব উপহার কিনতেন, সেই বিক্রি এবার একেবারে কমে গেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে দামি পোশাকের বিক্রি।
ভাসাভির ফ্লোর ইনচার্জ ফরিদ আহমেদ বলেন, এখন উপহারের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে পোশাক বেশি খোঁজেন ক্রেতারা। আগে ঈদ মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ক্রেতা আসতেন। এ বছর তা কমে ৫০০–৬০০–তে নেমেছে। গত বছরের তুলনায় এবারের ঈদে তাঁদের বিক্রি কমেছে ৬০ শতাংশ। বিগত বছরগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে যেখানে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ পাঞ্জাবি বিক্রি হতো, এবার সেই সংখ্যা কমে ৬০ থেকে ১০০টিতে নেমেছে।