২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

চাইলেই কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না আইপিএস–জেনারেটর

গরমের সময় আইপিএসের চাহিদা বেড়ে যায়
ছবি : সংগৃহীত

দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের প্রভাবে বাজারে আইপিএস ও জেনারেটরের মতো পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে। পাইকারি ও খুচরা—উভয় বাজারে কিনতে চাইলেই এসব পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও আইপিএস কিনতে কিছুটা বাড়তি দাম দিতে হচ্ছে। বাজার ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিদ্যুৎ না থাকায় অনেকে আইপিএস দিয়ে ঘরে বাতি ও পাখা চালাতে চান। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরা কিনতে চাইছেন জেনারেটর। অবশ্য জেনারেটর ব্যক্তিমালিকানায় না কিনে অনেকে যৌথ বিনিয়োগে কেনেন। আইপিএস এমন একটি যন্ত্র, যা শক্তি সঞ্চিত করে রাখতে পারে।

পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সাধারণ মানের একটি আইপিএসের দাম ১৫ হাজার থেকে শুরু করে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে এখন আইপিএস কিনতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গেলে আগে ক্রয়াদেশ দিতে হচ্ছে। চাহিদা বেশি হওয়ার সাধারণ মানের আইপিএসের দাম বেড়েছে অন্তত ২ থেকে ৫ হাজার টাকা। রহিম আফরোজের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তাদের তৈরি আইপিএসের দাম ২১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭ লাখ ২২ হাজার টাকার মধ্যে।

সাইফ পাওয়ারটেকের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা হাসান রেজা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে আইপিএসের সংকট হওয়ার অন্যতম কারণ, গত কয়েক বছর বিদ্যুতের সমস্যা প্রকট না হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা ভেবে নিয়েছিলেন যে এই পণ্যটির চাহিদা থাকবে না। এ জন্য তাদের প্রস্তুতি ছিল না। তাই ক্রেতাদের পণ্য পেতে বিলম্ব হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে এখন জেনারেটরের সরবরাহ কম। বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য সাধারণ মানের জেনারেটরের দাম ৫ হাজার টাকা থেকে ২০ লাখ টাকার মধ্যে হয়ে থেকে। শিল্পে ব্যবহারের জন্য ধারণক্ষমতা অনুযায়ী দাম কয়েক কোটি টাকাও হয়ে থাকে।

ওয়ালটন জেনারেটরের চিফ বিজনেস অফিসার আল ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটরের চাহিদা বেশ বেড়েছে। আমরাও ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। বর্তমানে জেনারেটরের ব্যবসা ভালো হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এর চাহিদা আরও বাড়বে।’

রাজধানীর নবাবপুর এলাকায় অন্যান্য ইলেকট্রিক পণ্যের পাশাপাশি আইপিএস ও জেনারেটর কিনতে পাওয়া যায়। ছোট-বড় প্রায় ৪১টি ভবনে ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা। তবে ভালো মানের জেনারেটর কিনতে হলে বড় কোম্পানি থেকে নেওয়াই ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। সে ক্ষেত্রে বিক্রয়োত্তর সেবা পেতে ঝামেলা হয় না।

নবাবপুরের মোহন ইলেকট্রিক মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইপিএসের সরবরাহ এবার বেশ কম। তবে বাজারে চার্জার ফ্যানের সরবরাহ ভালো। অনেকে আইপিএস কিনতে এসে চার্জার ফ্যান কিনছেন। আইপিএসের জন্য বলে যাচ্ছেন। আমরা ক্রয়াদেশ পেলে কোম্পানি বা আমদানিকারক থেকে সংগ্রহ করে ক্রেতাদেরকে সরবরাহ করছি।’

বর্তমানে বিদ্যুতের ঘাটতি হওয়ায় আইপিএস সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে
ছবি : সংগৃহীত

বাজারে পণ্যের সংকটের কারণে আইপিএসের দাম একটু বেশি বলে জানান তিনি।

এ পণ্যের প্রস্তুতকারক ও আমদানিকারকেরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বিদ্যুতের ঘাটতি না হওয়ার ফলে আইপিএসের ব্যবসা একেবারে পড়তির দিকে ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুতের ঘাটতি হওয়ায় সরবরাহে সংকট তৈরি হয়েছে।

তাঁরা আরও বলেন, জেনারেটরের মতো পণ্য দেশে উৎপাদন সময়সাপেক্ষ। অন্যদিকে ডলার–সংকটে আমদানি চাপে থাকায়, এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ খাতের দেশীয় কোম্পানিগুলো চেষ্টা করবে দ্রুত এসব পণ্য উৎপাদন করে বাজারে ছাড়তে। তবে একটু সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তাঁরা; কারণ, লোডশেডিং কম গেলে এই পণ্যের চাহিদা আবার রাতারাতি কমে যেতে পারে।

মগবাজারের জুয়েল মোটরসের স্বত্বাধিকারী জুয়েল দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কয়েকটি কোম্পানির পরিবেশক হিসেবে কাজ করছি অনেক দিন হলো, কিন্তু এমন পরিস্থিতি কখনো হতে দেখিনি। ১০টা আইপিএসের জন্য বললে, দিচ্ছে ১টা বা ২টা। ফলে ক্রেতাদেরকে দেওয়া কথা আমরা রাখতে পারছি না।’

তবে কোম্পানিগুলো বলছে, দেশে আবার কখনো আইপিএসের ব্যবসা চাঙা হতে পারে, এটা তাদের ধারণাতেই ছিল না। কারণ, বিদ্যুতের বড় সংকট ছাড়া আইপিএস এখন কেউ কেনেন না বললেই চলে। তবে জেনারেটরের ব্যবসা সারা বছরই হয়। কারণ, নতুন বাড়ি তৈরি হলে মানুষ জেনারেটর কেনে। কিংবা বড় কোনো শিল্পপার্ক গড়ে তোলা হলেও জেনারেটর কেনা হয়।

এনার্জিপ্যাকের পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জি বিভাগের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা মাসুম পারভেজ বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর জেনারেটর বিক্রি প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। তবে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় সংকট ও স্থানীয় মুদ্রার দরপতনের ফলে বর্তমানে জেনারেটরের বাজার চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বাসাবাড়ি তো বটেই, দোকানপাট ও শিল্পকারখানাও বর্তমানে বিদ্যুতের ঘাটতিতে ভুগছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় জেনারেটর চালিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সচল রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। প্রচণ্ড গরমে কর্মজীবীরা অস্থির হয়ে পড়ছেন। তাতে স্বাভাবিক কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে।

মোহাম্মদপুরের দেশি মসলা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আরাফাত হোসেন বলেন, ‘আমরা মসলা ভাঙিয়ে ব্যবসা করে থাকি। বিদ্যুৎ না থাকার ফলে জেনারেটর কিনতে চাইছি। কিন্তু যে দামেরটা কিনতে চাই, সেই মডেলটা বাজারে নেই। এদিকে ডিজেলের দামও বেশি, তাই উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আমিন খন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, এ বছর বাজারে আইপিএস ও জেনারেটরের চাহিদা অনেক ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশের ওপরে বেড়েছে। আর সংকটে দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের মতো। দাম বাড়িয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ভালো ব্যবসাও করছেন। এমনও আছে একজন ২০ কনটেইনার চার্জার ফ্যান আমদানি করে বিক্রি করেছেন।

দেশে আইপিএসের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান রহিমআফরোজ। এ ছাড়া হ্যামকো ও লুমিনাসের মতো ব্র্যান্ডের আইপিএসও বেশ জনপ্রিয়। এনার্জিপ্যাক ও ওয়ালটনের মতো দেশীয় প্রতিষ্ঠান জেনারেটর তৈরি করছে। আইপিএসের ব্যবসা পড়তির দিকে থাকায় এই বাজারের সঠিক ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে জেনারেটরের বাজারের আকার ন্যূনতম ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে বলে জানা গেছে। এ বাজার প্রতিবছর বাড়ছে।