সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সে কী হচ্ছে, অফিসে ঢুকতে পারছেন না সিইও

সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স

চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের অন্য পরিচালকদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে এখন তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের জন্যই কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর রাশেদ বিন আমানের সহযোগিতা ও উপস্থিতি জরুরি। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এমনটাই মনে করছে।

কিন্তু বেশ কয়েক দিন ধরেই কোম্পানিটির প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে পারছেন না মীর রাশেদ। তাঁর কক্ষ তালাবদ্ধ করে রাখার পাশাপাশি পাসওয়ার্ডও বদলে ফেলা হয়েছে। সিইওর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ জানুয়ারি আইডিআরএ সোনালী লাইফের পর্ষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে চিঠি দিয়ে তাঁর দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি না করার অনুরোধ জানায়।

অন্যদিকে সোনালী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ তা তো মানেইনি, উল্টো গত শনিবার এক বৈঠক ডেকে সিইও মীর রাশেদকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও বলা হয়েছে, আইডিআরএর অনুমোদন সাপেক্ষে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বরখাস্তের পরদিন গতকাল রোববার মীর রাশেদকে নিরাপত্তা দিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের শরণাপন্ন হয় আইডিআরএ।

আইডিআরএর মুখপাত্র ও পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এরপরও যদি সোনালী লাইফের পর্ষদ আইডিআরএর সিদ্ধান্ত অমান্য করে, তাহলে আইন অনুযায়ী পরের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ পরের পদক্ষেপ কী হতে পারে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি তিনি।

আইডিআরএ চিঠিতে ডিএমপিকে বলেছে, সোনালী লাইফের চেয়ারম্যানসহ কতিপয় পরিচালকের সংঘটিত আর্থিক অনিয়ম তদন্তে নিরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিরীক্ষার প্রয়োজনে বিভিন্ন প্রকার দলিল সরবরাহ করতে বলা হয়েছে কোম্পানির সিইওকে। কিন্তু সিইওকে অফিসে প্রবেশ ও তদন্তকাজে সহায়তা করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডার ও বিমাগ্রহীতাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘ডিএমপির কাছে আইডিআরএ চিঠি পাঠিয়েছে শুনে আমি হতবাক হয়েছি। পর্ষদের এখতিয়ার আছে বলেই সিইওকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে অবশ্য আইডিআরএ অনুমোদন করার পর।’

আইডিআরএ বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অনুমোদন না করলে কী করবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘আমরা আইডিআরএর পদক্ষেপের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অনুমোদন না করলে কিছু করার নেই। সিইও অফিস করবেন।’

সিইও মীর রাশেদ বিন আমান যাতে সশরীর তাঁর দপ্তরে প্রবেশ করতে পারেন, প্রয়োজনীয় সফটওয়্যারে প্রবেশাধিকার পান এবং দায়িত্ব পালনকালে কেউ কোনোরূপ বাধা সৃষ্টি করতে না পারে—এ বিষয়ে পুলিশি সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে আইডিআরএর চিঠিতে। এতে বলা হয়, তদন্তাধীন আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের কতিপয় সদস্য জড়িত। তাঁরাই সিইওকে দপ্তরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না এবং এ কারণে তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ তাঁর পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে সোনালী লাইফের পর্ষদে আরও আছেন তাঁর স্ত্রী ফজলুতুন নেছা; ছেলে মোস্তফা কামরুস সোবহান ও তাঁর স্ত্রী সাফিয়া সোবহান চৌধুরী; দুই মেয়ে ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া ও তাসনিয়া কামরুন আনিকা; তাসনিয়া কামরুন আনিকার স্বামী শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল।

পর্ষদকে চিঠি দেওয়ার পরদিন ১১ জানুয়ারি সকালে মীর রাশেদ বিন আমান কোম্পানিতে প্রবেশ করতে গেলেও তাঁকে তা করতে দেওয়া হয়নি বলে তিনি আইডিআরএর কাছে আবেদন করেছেন। এতে তিনি জানান, তাঁকে প্রবেশে শুধু বাধা দেওয়া নয়, বরং ‘অচেনা’ ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করে রামপুরা থানায় অভিযোগ করা হয়েছে যে তিনি অবৈধভাবে কোম্পানিতে প্রবেশ করেছেন। এরপর পুলিশও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

সোনালী লাইফ ২০১৩ সালে নিবন্ধন পাওয়া একটি নতুন প্রজন্মের জীবন বিমা কোম্পানি, যার ২০৫টি শাখা রয়েছে। এর ৭ লাখের বেশি বিমা গ্রাহক রয়েছে। এজেন্ট আছে ৩০ হাজারের মতো। কোম্পানিতে প্রায় ৮০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসসহ মালিকপক্ষের মাধ্যমে ২০০ কোটির বেশি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। মালিকপক্ষের মাধ্যমে কোম্পানি থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ মানি লন্ডারিং করা হয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে। তবে মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না, তা তদন্ত করছে বিএফআইইউ। সংস্থাটি সম্প্রতি এ জন্য দুই সদস্যের তদন্ত দল গঠন করেছে।

কোম্পানির সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে মীর রাশেদ বিন আমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখনো কোম্পানির সিইও। শেয়ারহোল্ডার ও পলিসিহোল্ডারদের পাশাপাশি পুরো কোম্পানির স্বার্থ দেখা আমার দায়িত্ব। তদন্ত চলাকালীন পর্ষদ বৈঠক হওয়ারই বৈধতা নেই। “সিইও ছুটিতে রয়েছেন” বলে আইডিআরএর কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ১০ দিন আগে তদন্ত পেছানোর দাবি জানায় পর্ষদ। অথচ এখন সিইওকেই বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সব মূলত সুষ্ঠু তদন্ত হতে না দেওয়ার চেষ্টা।’

এদিকে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সুরক্ষায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানা গেছে।