বিমা পরিচালক হতে শেয়ার ধারণ করতে হবে এক বছর

এই সংবাদ ২০২৪ সালের ২০ জুলাই প্রথম আলোর ছাপা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কিন্তু তখন দেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় এই সংবাদ সময়মতো অনলাইনে প্রকাশ করা যায়নি। ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর এখন তা করা হলো।

বিমাপ্রতীকী ছবি

শেয়ার ধারণের সময় দ্বিগুণ করে দেশের বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোর পরিচালক নির্বাচনের নতুন বিধিমালা তৈরি করেছে সরকার। শেয়ার ধারণের এ সময়সীমা আগে ছিল ছয় মাস, এখন করা হয়েছে এক বছর। বিধিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে বিমা কোম্পানির কোনো উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারী সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালক হতে চাইলে তাকে ন্যূনতম এক বছর আগে থেকে ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে।

বিমা কোম্পানিতে উদ্যোক্তা, শেয়ারধারী ও স্বতন্ত্র—এ তিন ধরনের পরিচালক রয়েছে। বিধিমালায় বলা হয়েছে, উদ্যোক্তা ও শেয়ারধারীরা পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার এক বছর আগে থেকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের কমপক্ষে ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। আর নিরপেক্ষ পরিচালক নির্বাচিত হবে পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিধিমালা জারি করেছে। নতুন এ বিধিমালা কার্যকরের জন্য ১৬ জুলাই তা দেশের সব জীবন বিমা ও সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোতে পাঠিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

বিধিমালায় উদ্যোক্তা পরিচালক নির্বাচন নিয়ে বলা হয়েছে, শূন্য পদ পূরণের জন্য কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) উদ্যোক্তা শেয়ারধারীরা তাঁদের নিজেদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা পরিচালক নির্বাচন করবেন। যাঁরা পরিচালক নির্বাচিত হবেন, তাঁদের এক বছর আগে থেকে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ২ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। আর পরিচালনা পর্ষদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করতে হবে, পরে যা এজিএমে চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হতে হবে। নতুন পরিচালক নিয়োগের দুই মাস আগে পরিচালকদের শূন্য পদের সংখ্যা উল্লেখ করে আইডিআরএর কাছে আবেদন করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষক মো. মাইন উদ্দিন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালকদের ক্ষেত্রে এক বছর শেয়ার ধারণের বিষয়টি ঠিকই আছে। ধীরে ধীরে এ সময় আরও বাড়ানো উচিত।

বিধিমালায় আরও বলা হয়েছে, পরিচালক নির্বাচনের তারিখ, সময়, স্থান ও অন্যান্য বিষয় এবং নির্বাচন করতে আগ্রহী পরিচালকের সংখ্যাসহ নির্বাচনের তফসিল নির্বাচনের ৬০ দিন আগে অন্তত দুটি বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে রেকর্ড তারিখের এক মাসের মধ্যে। তা না হলে নতুন করে আবার রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বিষয়ে বলা হয়েছে, বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে একাধিক পরিচালকের সমন্বয়ে গঠিত হবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। কমিটির সদস্য হবে তিনজন। তাঁদের কোনো সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না এবং কোনো সদস্য একই সঙ্গে বাছাই কমিটি ও আপিল কমিটির সদস্য হতে পারবেন না। নির্বাচনের আগে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাছাই কমিটি গঠন করবে। বাছাই কমিটির সদস্য হবে দুজন। আর এক সদস্যের আপিল কমিটি গঠন করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ও বাছাই কমিটির কোনো সিদ্ধান্তে কোনো ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে তিনি আপিল কমিটির কাছে আপিল করতে পারবেন। এ বিষয়ে আপিল কমিটির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, একজন শেয়ারধারী তাঁর ধারণকৃত প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে একটি ভোট দেওয়ার অধিকারী হবেন।

আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, দেশে ৩৬টি জীবন বিমা কোম্পানি কাজ করছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশন, মেটলাইফ এবং ভারতীয় এলআইসি ছাড়া বাকি ৩৩টি বেসরকারি কোম্পানির ওপর এ বিধিমালা কার্যকর। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বীমা করপোরেশন ছাড়া বাকি ৪৫টি সাধারণ বিমা কোম্পানির ওপরও এ বিধিমালা প্রযোজ্য। একেকটি বিমা কোম্পানিতে সর্বোচ্চ ২০ জন করে পরিচালক থাকার বিধান রয়েছে। তবে গড়ে আছে ১৫ জন করে। সেই হিসাবে এক হাজারের বেশি পরিচালক রয়েছেন দেশের বিমা কোম্পানিগুলোতে।

বিমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন বিধিমালাকে আমরা স্বাগত জানাই। বিমা খাতের স্বার্থে এ বিধিমালা ইতিবাচক।’

শেয়ার ধারণের সময়সীমা ছয় মাস থেকে এক বছর করাকে কীভাবে দেখছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেকে অল্প সময় পর্যন্ত শেয়ার ধারণ করেও পর্ষদে চলে আসতেন। এখন সময়টা বাড়ল। তাতে ভালো হয়েছে। কারণ, এক বছরও শেয়ার ধারণ না করে পর্ষদে থাকা উচিত নয়।’