কাল বা পরশু ঈদ। ইতিমধ্যে অধিকাংশ শিল্পকারখানায় ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। শ্রমিকদের বড় অংশই পরিবার–পরিজনের সঙ্গে ঈদ কাটাতে বাড়ির দিকে রওনা হয়েছে। তবে অন্যবারের মতো এবারও কয়েক হাজার শ্রমজীবী মানুষকে বেতন-ভাতা ছাড়া নিরানন্দ ঈদ কাটাতে হবে। তাঁদের মধ্যে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকেরাও আছেন।
আশুলিয়া-সাভার, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা ও কুমিল্লায় ৯ হাজার ১৭৬টি শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা কমপক্ষে ২ হাজার ৬৮৮। শিল্প পুলিশের তদারকিতে এই কারখানা রয়েছে। তার বাইরে ঢাকা মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কয়েক হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে।
শিল্প পুলিশের সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জানান, ৮৩ শতাংশ শিল্পকারখানা এপ্রিল মাসের ১৫ দিনের মজুরি দিয়েছে। আর ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে ৯৫ শতাংশ শিল্পকারখানা। আজ রোববার কিছু কারখানা বেতন-ভাতা দেবে। তারপরও অল্পসংখ্যক কারখানার বেতন-ভাতা বকেয়া থাকবে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করায় বড় ধরনের আন্দোলন হয়নি এবার।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, শতভাগ কারখানা ঈদ বোনাস ও এপ্রিল মাসের অর্ধেক মজুরি পরিশোধ করেছে। শতভাগ কারখানায় ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য চট্টগ্রামে বিজিএমইএর সদস্য তিন পোশাক কারখানা এপ্রিলের মজুরি দেয়নি। এ বিষয়ে সংগঠনটির সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ‘বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত সচল ২ হাজার ২৩ কারখানার মধ্যে মাত্র ৩টি এপ্রিলের বেতন দিতে পারেনি। তাই শতভাগ কারখানা বেতন-ভাতা দিয়েছে বলে আমরা দাবি করছি।’
নারায়ণগঞ্জে ২ হাজার ১৯৪টি শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর সদস্যভুক্ত পোশাক ও বস্ত্র কারখানার সংখ্যা ৬২৭টি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত পোশাক ও বস্ত্র খাতের ১৫টি কারখানা বোনাস এবং ৬০টি কারখানা এপ্রিল মাসের অর্ধেক মজুরি পরিশোধ করেনি বলে জানান নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের পরিদর্শক বশির আহমেদ।
অবশ্য নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, আমাদের সংগঠনের সদস্য গাজীপুরে ড্রিম অ্যান্ড ড্রেস নিটওয়্যার এবং এনটিকেসি নিটওয়্যার, এই দুই কারখানার বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যা আছে। বাকি সব কারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধ করে ঈদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের মতো সাভার-আশুলিয়ার সব শিল্পকারখানার বেতন-ভাতা পরিশোধ হয়নি। এই অঞ্চলে ১ হাজার ৫২০টি শিল্পকারখানা রয়েছে। তার মধ্যে পোশাক ও বস্ত্র কারখানার সংখ্যা ৫০৯টি।
শিল্প পুলিশ-১–এর পুলিশ পরিদর্শক কামাল উদ্দিন বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় এক হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেতন–বোনাস দিয়েছে। বেতন–বোনাসের দাবিতে কোনো প্রতিষ্ঠানে অসন্তোষের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন সাভার থেকে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি]