শিল্পনগর বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়

সাখাওয়াত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন

সাভার চামড়াশিল্প নগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) কাজ পুরোপুরি শেষ না করেই আমাদের অনেকটা টানাহেঁচড়া করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে পরিবেশবান্ধব পরিবেশে পণ্য উৎপাদিত হবে—এটাই ছিল মূল লক্ষ্য। কিন্তু চার বছরেও চামড়াশিল্প ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নতুন বাজারও সৃষ্টি হয়নি। চার বছর ধরে চামড়ার বাজার নিম্নমুখী।

আমাদের অপরাধ কী। চামড়াশিল্পে যে পরিস্থিতি তৈরি হলো, এ জন্য কারা দায়ী? যাঁরা চামড়াশিল্প নগরের পরামর্শক ছিলেন, তাঁরা কি জানতেন না সেখানে সব কারখানা গেলে কী পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদিত হতে পারে? তাহলে সিইটিপি সেভাবে নির্মাণ করা হলো না কেন? চামড়াশিল্প নগরে কোরবানির সময়ে দিনে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু সিইটিপির দৈনিক পরিশোধন সক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। তাহলে এমন ঘাটতি কেন থাকল। যাঁরা পরামর্শক ছিলেন, তাঁরা কী মূল্যায়ন করেছেন? কারা পরামর্শক ছিলেন, কারা এর জন্য দায়ী—এসব খুঁজে বের করা উচিত।

হাজারীবাগ থেকে অনেক ট্যানারি এখনো সাভারে যেতে পারেনি। কারণ, তারা সাভারে প্লট পায়নি। তারা যদি সাভারে যেত, তাহলে পরিস্থিতি কী হতো। বর্তমান সিইটিপিতে যেহেতু বর্জ্য পরিশোধনে ঘাটতি আছে, সে জন্য কিছু ট্যানারি চালু রেখে আবার কিছু ট্যানারি বন্ধ রেখে রেশনিং করতেও আমরা রাজি আছি। আমাদের ইমেজ–সংকট যাতে আর না বাড়ে, সে জন্য আমরা সরকারের সহযোগিতা চাই। সিইটিপিতে মারাত্মক সমস্যা আছে। এটাকে আপগ্রেড করলে সমস্যার সমাধান হবে। আমাদের ব্যবসায়ে জরুরি ভিত্তিতে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

চামড়াশিল্প নগর বন্ধ করে দেওয়া হলে কাল থেকে চামড়া আমদানি করতে হবে। স্থানীয় বাজার সমস্যায় পড়বে। চামড়াশিল্প নগর বন্ধ করে দেওয়া সমাধান নয়। অপরিশোধিত বর্জ্য কিছুতেই যাতে ধলেশ্বরী নদীতে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই না অপরিশোধিত বর্জ্য নদীতে পড়ুক।

ট্যানারিতে উৎপাদিত চামড়ার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে নদীতে ফেলার কথা। এক ফোঁটা পানি গেলেও সেটা যাতে পরিশোধন করে ফেলা হয়। এটাই বলা ছিল।

সিইটিপিতে চারটি মডিউল রয়েছে। প্রতিবছর এসব পরিষ্কার করতে হয়। কিন্তু এ নিয়ম মানা হয় না। একটি মডিউল পরিষ্কার করা হয়েছে। তিনটিতে পলি পড়ে আছে। পলি পড়ার কারণে বর্জ্য পরিশোধন করা যাচ্ছে না। বর্তমানে যে সিইটিপি আছে, সেটাকে শতভাগ ব্যবহার করার উপযোগী কর্মপরিকল্পনা করা উচিত। কোরবানির সময় চাপ কমাতে প্রয়োজনে হিমাগার করা যেতে পারে। কোরবানির সময় দুই মাস চামড়া সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখা যেতে পারে। বে ও অ্যাপেক্স দুটি ইটিপি করার অনুমতি পেয়েছে। তারা যদি ইটিপির কাজ শেষ করে, তাহলে সিইটিপির ওপর চাপ কমবে।