প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তার সিংহভাগই মালিকদের জন্য
করোনা সংকট মোকাবিলায় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত সরকার, বিদেশি ক্রেতা ও দাতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে ৬২ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকার ঋণ প্রণোদনা ও আর্থিক সহায়তা পেয়েছে। তার মধ্যে ৮৩ দশমিক ৯৭ শতাংশই কারখানামালিকদের ব্যবসায়িক সংকট মোকাবিলায়। আর বেতন-ভাতা বাবদ শ্রমিকদের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ‘তৈরি পোশাক খাতে করোনাভাইরাস উদ্ভূত সংকট: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গবেষণায় এমনটাই উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, প্রণোদনার অর্থপ্রাপ্তিতে বড় কারখানাগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার ও তদবিরের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে টিআইবি। এতে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নাজমুল হুদা মিনা ও নূরে আলম মিল্টন। সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম।
টিআইবি বলেছে, চার দশক ধরে বিকশিত তৈরি পোশাক খাত এখনো প্রণোদনার ওপর নির্ভরশীল। মালিকপক্ষ সরকারের ওপর প্রভাব ও চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের সুবিধা আদায় করে। করোনার মতো সংকট মোকাবিলায় এই খাতের নিজস্ব সক্ষমতা এখনো তৈরি হয়নি। মালিকপক্ষ ব্যবসার সম্ভাব্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রণোদনা আদায় করলেও শ্রমিকদের অধিকার, সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করেনি। বরং করোনা সংকটের প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থে আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে কারখানা লে-অফ করেছে।
করোনা মহামারির অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তার বিধান যুক্ত করে শ্রম আইন-২০০৬-এর ১৬ ও ২০ ধারা সংশোধনের সুপারিশ করেছে টিআইবি। একই সঙ্গে তারা অঙ্গীকার অনুযায়ী তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষার জন্য বাকি তিনটি ল্যাব দ্রুত স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে।
টিআইবি বলছে, মালিকপক্ষ ব্যবসার সম্ভাব্য ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের কাছে বিভিন্ন প্রণোদনা আদায় করলেও শ্রমিকদের অধিকার, সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও কার্যকর কৌশল প্রণয়ন করেনি। বরং করোনা সংকটের প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রমিকের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থে আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে কারখানা লে-অফ করেছে।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, চার দশকে পুঞ্জীভূত একধরনের মানসিকতা পোশাক খাতের নেতাদের মধ্যে রয়েছে। সেটি হচ্ছে সরকারের প্রণোদনার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীলতা। সেটি করোনাকালে আরও বিকশিত হয়েছে। বোঝাটি সরকার ও জনগণের ওপর চলে এসেছে। তিনি বলেন, ‘করোনাকালে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেকই পেয়েছ পোশাক খাত। অথচ জিডিপিতে খাতটির অবদান ১০ শতাংশের মতো। কাজেই একধরনের বৈষম্যমূলক প্রণোদন দেওয়া হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিদেশি ক্রেতারাও নামমাত্র পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। কারখানামালিকদের চাপ দিয়েছে। নৈতিক ব্যবসায়িক চর্চায় তারা ব্যর্থ হয়েছে। সে কারণে পুরো বোঝা সরকারের ঘাড়ে এসে পড়েছে।