পর্যটকদের জন্য ছাদখোলা বাস

দেশের ভ্রমণপিপাসুরাও ইউরোপ-আমেরিকার মতো ছাদখোলা বাসে ঘুরতে পারবেন দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। এ জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি ট্যুরিস্ট বাস বা কোচ আনছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। এর মধ্যে দুটি বাস চলবে ঢাকা বিভাগের আকর্ষণীয় বিভিন্ন পর্যটন এলাকায়। দুটি বাস চলবে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পর্যটন এলাকায়। আর বাকি দুটি বাস চলবে সিলেট বিভাগের চারটি জেলায়। এসব বাস দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হলে আরও বাস আনা হবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তারা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্যানুযায়ী, দেশের পর্যটনশিল্পকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য এবারই প্রথম এসব ট্যুরিস্ট বাস কিনতে যাচ্ছে সরকার। ছয়টি বাস কিনতে সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। তাতে প্রতিটি বাসের দাম পড়বে ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। প্রতি বাসে আসন থাকবে ৪০ থেকে ৪৫ জনের। বাসে থাকবে ওয়াই-ফাই, গাইড। পর্যটকদের জন্য ছাদখোলা বাস কেনার প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ৫০ কোটি টাকার নিচে হওয়ায় এটি পরিকল্পনামন্ত্রী নিজ ক্ষমতাবলে অনুমোদন করতে পারবেন।

পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি উদ্যোগে চলতি বছরের শুরুতে প্রথমবারের মতো একটি ছাদখোলা বাস চালু হয়েছে। ৪৮ আসনবিশিষ্ট দ্বিতল বাসটি সকাল ৯টায় কক্সবাজারের কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে টেকনাফ পর্যন্ত চলাচল করছে। তবে সরকারিভাবে এবারই প্রথম পর্যটকদের জন্য দ্বিতল বাস কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মহিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আপাতত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ট্যুরিস্ট বাস চালু করতে চাই। পর্যটকেরা সকালে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে বাসে উঠবেন। সারা দিন বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকা ঘুরে আবার আগের জায়গায় নেমে যাবেন। একজন পর্যটকের কাছ থেকে কত টাকা ভাড়া রাখা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে মহিবুল হক জানান, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ভাড়া বর্তমান দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নির্ধারণ করা হবে।

করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, বলধা গার্ডেন, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জাতীয় সংসদ ভবন, সাভার স্মৃতিসৌধ, সোনারগাঁয়ের পানাম নগর, কারুপল্লিসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরবে। আর কক্সবাজার জেলায় কলাতলী থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে টেকনাফসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাবে এসব বাস। আর সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় চা-বাগান, হাওর, জমিদারবাড়ি, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে পর্যটকদের।

তবে পর্যটকদের জন্য এসব বাস আমদানির ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ছয় মাস বর্ষাকাল থাকে। বর্ষার ওই সময় খোলা ছাদের বাস কীভাবে চলবে। বর্ষায় পর্যটক পাওয়া যাবে কি না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। পর্যটন করপোরেশনের উপব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) শিপ্রা দে বলেন, ‘সরকারের ক্রয়নীতি (পিপিআর) অনুসরণ করে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট বাসগুলো কেনা হবে। ইউরোপ থেকেই এসব বাস আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, অনেক পর্যটক বর্ষায় ঘুরতে পছন্দ করেন। পর্যটকদের জন্য বর্ষা হলো আমেজ, বাধা নয়।

পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, করোনায় বিধ্বস্ত পর্যটন খাতের নাজুক অবস্থা কাটাতে এসব ছাদখোলা বাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।