বস্ত্র খাত
নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস চান ব্যবসায়ীরা
গ্যাসের অনিশ্চয়তা দূর করতে ৫-১০ বছর মেয়াদে ব্যবসাবান্ধব জ্বালানি নীতি প্রণয়ন ও সব কারখানায় ইভিসি মিটার স্থাপনের দাবি উদ্যোক্তাদের।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার জালাল আহমেদ স্পিনিং মিলস ও শাহ ফতেউল্লাহ টেক্সটাইল মিলস গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সুতা ও কাপড় বানায়। তাদের অনুমোদিত গ্যাসের চাপ হচ্ছে ১৫ পিএসআই (পাউন্ড পার স্কয়ারিংস বা প্রতি বর্গইঞ্চিতে গ্যাসের চাপের ইউনিট)। তবে চলতি জানুয়ারি মাসে বস্ত্রকল দুটিতে গ্যাসের চাপ দেখা যাচ্ছে গড়ে শূন্য থেকে ৪ পিএসআই। যে কারণে উভয় কারখানার উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।
এ দুটিসহ সাভার, ধামরাই, নরসিংদী ও গাজীপুরের ২২টি কারখানার গ্যাস–সংকটের তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) নেতারা বলেছেন, তিন মাস ধরে গ্যাস–সংকটে ভুগছে বস্ত্র খাত। প্রায় প্রতিটি কারখানায় গড়ে ২৫ শতাংশ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তাতে ১৭৫ কোটি ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। সে জন্য কারখানাগুলোয় উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবি জানান তাঁরা।
গত তিন মাস বা তারও বেশি সময় ধরে আমাদের কারখানাগুলো নির্ধারিত পিএসআইয়ে গ্যাস পাচ্ছে না। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস না দিয়ে পাইপলাইনে শুধু বাতাস সরবরাহ করে আমাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বিল নিচ্ছে।
বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর নেতারা গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ, ৫-১০ বছর মেয়াদি জ্বালানি নীতি প্রণয়ন ও সব কারখানায় ইভিসি মিটার স্থাপনসহ কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে তাঁরা নতুন করে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সরকারি উদ্যোগে উদ্বেগ জানান। বলেন, আবার দাম বাড়লে অনেক বস্ত্রকল টিকতে পারবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিটিএমএর সভাপতি মোহাম্মদ আলী। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি মো. ফজলুল হক, আবদুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন, মো. সালেউদ্দজামান খান প্রমুখ।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত তিন মাস বা তারও বেশি সময় ধরে আমাদের কারখানাগুলো নির্ধারিত পিএসআইয়ে গ্যাস পাচ্ছে না। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস না দিয়ে পাইপলাইনে শুধু বাতাস সরবরাহ করে আমাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বিল নিচ্ছে। ১ হাজার ২০০টি ইলেকট্রনিক ভলিউম ক্যারেক্টার বা ইভিসি মিটার আমদানি করা হলেও অল্পসংখ্যক মিলে তা স্থাপন করা হয়েছে। ইভিসি মিটার বসালে তিতাসের সিস্টেম লস কত শতাংশ, সেটি বোঝা যাবে। তাই হয়তো তারা ইভিসি মিটার স্থাপনে আগ্রহী নয়।’
২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিল্পে ক্যাপটিভ জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরবরাহ করা গ্যাসের দাম ৩৬১ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। গণমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, নতুন করে আবার গ্যাসের দাম ১০৩ থেকে ১১৬ শতাংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এমন তথ্য দিয়ে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে প্রতি কেজি সুতা উৎপাদনে ১৯ টাকা ৮৭ পয়সার বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়লে প্রতি কেজি সুতা উৎপাদনে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হবে ২০ থেকে ২৩ টাকার। এমনটি হলে বিদ্যমান প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধ্বংস হয়ে বৈধ ও অবৈধ দুভাবেই সুতা ও কাপড় আমদানি উৎসাহিত হবে। বিদ্যমান বিনিয়োগ অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। মিলগুলো সময়মতো ঋণ পরিশোধেও ব্যর্থ হবে।
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘২০১৯ সালে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সাত মাস পর করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যে পড়ে বস্ত্র খাত। চলতি বছর কারখানাগুলো লাভের মুখ দেখতে শুরু করবে। ফলে আমাদের একটি দম নেওয়ার সময় দেওয়া দরকার। তা ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের জন্য মোট চাহিদার ২৬ শতাংশ এলএনজি আমদানির যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল, সেটিই এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি।’
প্রত্যেক বছর প্রায় ৬০০ কোটি মিটার কাপড় আমদানিতে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। দেশেই শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ কাপড় জোগান দেওয়া সম্ভব। কিন্তু জ্বালানি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে অনেকেই বিনিয়োগ করতে চান না—এমন মন্তব্য করে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ৫-১০ বছরের জন্য ব্যবসাবান্ধব জ্বালানি নীতি দরকার। যে নীতিতে থাকবে কোন বছর গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কত শতাংশ বাড়বে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট রূপকল্প থাকলেই উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে যাবেন। তাতে কর্মসংস্থানও বাড়বে।