দ্বিতীয় ঢেউ সামলানোর প্রস্তুতি

করোনার শুরুতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে তোড়জোড় থাকলেও পরে তা শিথিল হয়ে যায়। তবে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে নতুন করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন পোশাকশিল্প মালিকেরা। আসছে সপ্তাহেই কারখানাগুলোকে সতর্ক করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়ার কাজ করছে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।

বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন। সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন বা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। তখন কারখানা বন্ধ করা নিয়ে অনেক নাটক হয়। পরে ৬ এপ্রিল কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত দেয় বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। তা ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলে। পরে সরকারের সবুজ সংকেত পেয়ে ২৬ এপ্রিল থেকে কারখানা খোলার প্রক্রিয়া শুরু করে সংগঠন দুটি। কারখানা চালু করতে কী কী বিষয় পরিপালন করতে হবে, সে বিষয়ে গাইডলাইন বা নির্দেশনা দেওয়া হয়। ধাপে ধাপে কারখানা খোলার কথা থাকলেও সেটি মানা হয়নি।

গত রোববার পর্যন্ত ২০৪টি শিল্পকারখানার ৪৭৯ জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৬৭ জন। মারা গেছেন ৬ জন। আর ২০৪টি শিল্পকারখানার মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যসংখ্যা ১০৯। এসব কারখানার ৩৪৬ জন পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪ জন।

করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা অধিকাংশ কারখানা ঢিলেঢালা ভাব দেখালেও পোশাকশ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক হারে করোনা ছড়ায়নি। শিল্প পুলিশের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত রোববার পর্যন্ত ২০৪টি শিল্পকারখানার ৪৭৯ জন শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৪৬৭ জন। মারা গেছেন ৬ জন। আর ২০৪টি শিল্পকারখানার মধ্যে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যসংখ্যা ১০৯। এসব কারখানার ৩৪৬ জন পোশাকশ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৪ জন।

এদিকে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে গত মাস থেকেই আলোচনা হচ্ছে। বিশ্বে ইতিমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হচ্ছে ইউরোপ। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে সাত দিনের ব্যবধানে আক্রান্ত হয়েছেন সাত লাখের বেশি মানুষ। সংক্রমণের হিসাবে এই সংখ্যা একটি রেকর্ড বটে।
শীত মৌসুমে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়টি মাথায় রেখে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কারখানাগুলোকে নোটিশ দেয় বিজিএমইএ। এতে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের কেউ আক্রান্ত থাকলে তা বিজিএমইএকে অবহিত করতে সদস্যদের অনুরোধ জানানো হয়।

করোনার শুরু থেকে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছিল, সেগুলো আমরা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী সপ্তাহেই বড় একটি ক্যাম্পেইন শুরু করব। কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না, সেটিও আগের মতোই তদারক করা হবে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. মশিউল আজম

জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি মো. মশিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার শুরু থেকে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছিল, সেগুলো আমরা পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী সপ্তাহেই বড় একটি ক্যাম্পেইন শুরু করব। কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কি না, সেটিও আগের মতোই তদারক করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি কারখানাগুলো স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছে।

বিজিএমইএ গত মঙ্গলবার এক নোটিশে তাদের ঢাকা ও চট্টগ্রাম কার্যালয় এবং গুলশানের পিআর অ্যান্ড মিডিয়া সেলে আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা সীমিত করার বিষয়ে নোটিশ জারি করে। তাতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদেরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’

বিজিএমইএ জানিয়েছে, তাদের ঢাকা ও চট্টগ্রাম কার্যালয় এবং গুলশানের পিআর অ্যান্ড মিডিয়া সেলের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা–কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কার্যালয় এবং পিআর অ্যান্ড মিডিয়া সেল কার্যালয়ে কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা সভা আয়োজনের প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিতে হবে।

গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কারখানা খুলে দেওয়ার পর কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছিল। তবে মাঝখানে সেটি কিছুটা শিথিল হয়ে যায়।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কারখানা খুলে দেওয়ার পর কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়েছিল। তবে মাঝখানে সেটি কিছুটা শিথিল হয়ে যায়। তবে আমরা আবারও কারখানাগুলোকে শ্রমিকদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পূর্বে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও পায়ের জুতা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করার বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছি। আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে সব কারখানাকে চিঠি দেওয়া হবে।’

কারখানাগুলো বর্তমানে স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলে অভিযোগ করেন শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার। গতকাল তিনি বলেন, করোনার শুরুর দিকে কারখানায় প্রবেশের আগে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ ও অসুস্থদের ছুটি দেওয়া হলেও এখন তা বন্ধ। করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা এলে কারখানার মালিকেরা স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাই শ্রমিকদের সতর্ক থাকতে হবে। কারখানায় আসা-যাওয়ার সময় ও কর্মক্ষেত্রে সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।