দেশে শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা কমেছে

প্রতীকী ছবি
প্রথম আলো

২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যেসব দেশ দারিদ্র্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। এই সময়ে বাংলাদেশের দারিদ্র্য ৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু কোভিডের কারণে সেই অর্জন ফিকে হয়ে আসছে।

অন্যদিকে দেশে শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা কমেছে। ২০০০-২০০৯ সালে দেশের শ্রমশক্তির উৎপাদনশীলতা ছিল ৫ শতাংশের মতো, ২০০৯-২০১৯ সালে তা কমে ৪ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

শিল্প কিংবা সেবা খাতের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম উৎপাদনশীল কৃষিতে এখনো শ্রমশক্তির একটি বড় অংশ (২০১৬-১৭ সালের হিসাবে ৪০ দশমিক ৬ শতাংশ) নিয়োজিত। উৎপাদনশীল খাতে কাজ করছেন মাত্র ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ শ্রমিক। তাই সার্বিকভাবে জিডিপিতে উৎপাদনশীল খাতের অবদান বাড়লেও কর্মসংস্থানে তার প্রতিফলন নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।

আরও পড়ুন

এই প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক সায়মা হক বলেন, ‘শ্রমিকদের দক্ষতা, জ্ঞান, উৎপাদনশীলতা, উদ্ভাবন ও উচ্চপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত কম। কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করায় শ্রমিকদের দক্ষতা সেভাবে বাড়েনি। সার্বিকভাবে আমাদের শ্রমিকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা কম। ফলে উৎপাদনশীলতায় তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে।’

এদিকে কোভিড-১৯-এর জেরে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শ্রমবাজারে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। মহামারির কারণে ২০২০ সালে ৮ কোটি ১০ লাখ মানুষের কাজ গেছে। যেসব দেশের তথ্য পাওয়া গেছে, সেসব দেশেরই কর্মবাজার সংকুচিত হয়েছে।

‘এশিয়া-প্যাসিফিক এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০২০’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রম সময় হ্রাসের অন্যতম কারণ হলো এ সময় শ্রমিকেরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেছেন এবং এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কর্মসংস্থানে ধস নেমেছে। প্রতিবেদনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে এই অঞ্চলের বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ৭ শতাংশে উঠতে পারে, ২০১৯ সালে যা ছিল ৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

শ্রমিকদের দক্ষতা, জ্ঞান, উৎপাদনশীলতা, উদ্ভাবন ও উচ্চপ্রযুক্তিতে বিনিয়োগ অত্যন্ত কম। কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না করায় শ্রমিকদের দক্ষতা সেভাবে বাড়েনি
সায়মা হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, অধিকাংশ দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর শ্রম সময় কমেছে। এ ছাড়া পুরুষের তুলনায় নারীর সক্রিয়তা হ্রাসের হার বেশি। পাশাপাশি তরুণদের শ্রম সময় সবচেয়ে বেশি কমেছে। কাজ হারানোর ক্ষেত্রেও তাঁরা এগিয়ে।

আইএলওর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ সারা এল্ডার প্রতিবেদনে বলেছেন, নারী ও তরুণেরা কীভাবে কাজ হারাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তরুণদের কাজ খুঁজে পাওয়া আরও কঠিন হবে। কাজ পেলেও সেটা যে তাঁদের মনমতো হবে, সে সম্ভাবনা কম। লাখ লাখ নারীকে এই মহামারির কারণে উচ্চমূল্য দিতে হয়েছে। তাই পূর্ণকালীন কাজে ফিরে যেতে নারী ও তরুণদের অনেক সময় লেগে যেতে পারে।

এদিকে শ্রম সময় হ্রাসের কারণে গড় আয় কমছে। সামগ্রিকভাবে দেখা গেছে, ২০২০ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে শ্রমিকদের আয় ১০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে বলে প্রাক্কলন করেছে আইএলও। তাতে মোট দেশজ উৎপাদন ৩ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে বেকারত্বজনিত দারিদ্র্য বেড়েছে। প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, ২০২০ সালে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২ কোটি ৫০ লাখ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনে এই বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অসমতা বাড়তে পারে।