চামড়া সংরক্ষণেই বেশি জোর পোস্তার ব্যবসায়ীদের

পোস্তার একটি আড়তে চামড়া সংরক্ষণ করছেন শ্রমিকেরা। গত রোববার পুরান ঢাকার পোস্তায়।ছবি: শফিকুল ইসলাম

করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে চামড়ার দাম। সরকারও ইতিমধ্যে চামড়ার দাম বাড়িয়েছে। এবার লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে ৭ টাকা আর খাসির চামড়ার দাম ৩ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

এ অবস্থায় চলতি বছর কোনো অবস্থায় যেন চামড়া নষ্ট না হয়, সেই প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, চামড়া নষ্ট না হলে ভালো দাম পাওয়া সম্ভব। ফলে সব মিলিয়ে এ বছর চামড়ার বাজার গত কয়েক বছরের চেয়ে ভালো যাবে বলেই ধারণা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। এর মধ্যে কোরবানি হয় ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি পশুর।

চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ

পুরান ঢাকার লালবাগের পোস্তার চামড়ার আড়তগুলো কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের বড় জায়গা। এই এলাকায় বর্তমানে ১১০টির মতো কাঁচা চামড়ার আড়ত রয়েছে। সম্প্রতি পোস্তা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি ব্যবসায়ীরা চামড়া সংরক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে জন্য আগেভাগে অনেকেই লবণ কিনে রেখেছেন।

পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছরের চামড়ার প্রায় অর্ধেকই আসে কোরবানির ঈদের মৌসুমে। তাই এ সময়ের জন্য বাড়তি প্রস্তুতি রাখতে হয় তাঁদের।

কোরবানির ঈদের দিন সকাল থেকেই চামড়া সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করেন পোস্তার আড়তদারেরা। মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন তাঁরা। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যন্ত চলে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কার্যক্রম।

পোস্তার ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানোর ৪ থেকে ৯ ঘণ্টার মধ্যে লবণ দিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হয়; তা না হলে ওই চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। তাই এ বছর চামড়া সংরক্ষণের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছেন আড়তদারেরা।

পোস্তার একটি আড়তে চামড়া সংরক্ষণ করছেন শ্রমিকেরা। গত রোববার পুরান ঢাকার পোস্তায়।
ছবি: প্রথম আলো

পোস্তার কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো.আফতাব খান বলেন, ‘ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় প্রতিবছর অন্তত ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কোরবানির চামড়া নষ্ট হয়। বর্তমানে গরম অনেক বেশি, এ ছাড়া জ্যামের কারণে চামড়া নিয়ে আসতেও অনেক সময় লাগে। তাই পোস্তা এলাকায় সবাইকে চামড়া না এনে নিজ নিজ এলাকায় লবণজাত করার পরামর্শ দিচ্ছি আমরা।’

লবণজাত করে চামড়া সংগ্রহের জন্য পোস্তার ব্যবসায়ীরা সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, বেড়িবাঁধ, কেরানিগঞ্জ, জিঞ্জিরা, টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, সোনারগাঁও, মুন্সিগঞ্জসহ ঢাকার আশপাশের বেশ কিছু এলাকায় লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছেন বলে জানান আফতাব খান।

ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় চামড়ার দাম একটু কম থাকে। তাই অনেকে বেশি দামের আশায় চামড়া সরাসরি পোস্তায় নিয়ে আসেন। চামড়া ব্যবসায়ীদের অনুরোধ, কাছাকাছি স্থানে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করা হোক; তাতে চামড়ার গুণগত মান ঠিক থাকবে, দামও ভালো পাওয়া যাবে।

লবণের বাড়তি দাম

চলতি বছর বাজারে লবণের দাম অনেক বেশি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন পোস্তার ব্যবসায়ীরা। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর লবণের দাম বস্তাপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বেড়েছে। গত বছর কোরবানির সময় ৭৪ কেজির একটি লবণের বস্তার দাম ছিল ৬৭০ থেকে ৭০০ টাকা। গত রোজার ঈদ পর্যন্ত দাম ছিল বস্তাপ্রতি প্রায় ৮০০ টাকা। কিন্তু গত দেড় মাসে ক্রমান্বয়ে দাম বেড়ে এখন বস্তাপ্রতি লবণের দাম হয়েছে ১ হাজার ৭০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, লবণের সরবরাহ ঠিক আছে। তবে দাম বেশি হওয়ায় চামড়ার দামেও এর প্রভাব পড়তে পারে।

পাওনা টাকা

এদিকে অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও ট্যানারিমালিকদের কাছ থেকে পাওনা টাকা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন পোস্তার অনেক ব্যবসায়ী। পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ী মো. শাহাদাত হোসাইন বলেন, ‘আমি প্রায় ৩৩ লাখ টাকা পাব ট্যানারিমালিকদের কাছে—এভাবে তো ব্যবসা করা যায় না। তাই এ বছর নগদ টাকায় যতটুকু চামড়া কিনতে পারব, ততটুকুর জন্যই প্রস্তুতি নিয়েছি।’

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, পাওনা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে এখনো খুব একটা ইতিবাচক সাড়া পাননি পোস্তার ব্যবসায়ীরা। তবে ট্যানারিমালিকেরা সব পাওনা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

এ বছর এমনিতেই লবণের দাম বেশি। পরিবহন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচও বেশি। তাই ঈদের আগে পাওনা টাকা ফেরত না পেলে চামড়া ব্যবসায়ীরা অনেক অসুবিধায় পড়বেন বলে জানান চামড়া ব্যবসায়ীরা।