এসি কিনুন কিস্তিতে, শোধ হবে মাসে মাসে
বাকিতে এসি কিনতে অনেক সময় অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয়। বেশির ভাগ ব্যাংকের কার্ডেও রয়েছে সুদ। তবে এখন বেশির ভাগই সুদ নিচ্ছে না। কিস্তিতেও বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে না।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) এখন এতই প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে যে পরিবেশক ও ডিলাররা কিস্তিতে এই যন্ত্র কেনার সুযোগ দিচ্ছে। সঙ্গে ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে মাসে মাসে কিস্তিতে টাকা দেওয়ার সুবিধা তো আছেই। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এসি কিনতে ঋণ দিচ্ছে। এর ফলে এসি এখন মধ্যবিত্তদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠছে।
বাকিতে এসি কিনতে অনেক সময় অতিরিক্ত সুদ গুনতে হয়। বেশির ভাগ ব্যাংকের কার্ডেও রয়েছে সুদ। তবে এখন বেশির ভাগই সুদ নিচ্ছে না। কিস্তিতেও বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে না। এই সুবিধার ফলে পুরো অর্থ একসঙ্গে পরিশোধ করতে হচ্ছে না। এর পাশাপাশি এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও বিভিন্ন ব্যাংক এসি কিনতে ঋণসুবিধা চালু করেছে। ব্যবসা বাড়াতে এসির উৎপাদক, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এসি কিনতে গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে। এ কারণে ভোক্তারাও বাকিতে পণ্যটি কিনতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
সরকারের কর্মচারী মোহাম্মদ সাইফুল সম্প্রতি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এসি কিনেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই গরমে এসি ছাড়া চলা যাচ্ছিল না। এ জন্য কার্ড দিয়ে বাকিতে এসি কিনেছে। টাকা শোধ দিতে হবে ১২ মাসে। তবে কোনো সুদ দিতে হবে না। দীর্ঘমেয়াদি শোধ সুবিধা দেওয়ার চাপ কিছুটা কমেছে। সামনে ঈদের বোনাস দেবে, ফলে তেমন সমস্যা হবে না।’
ব্যবসা বাড়াতে এসির উৎপাদক, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এসি কিনতে গ্রাহকদের ঋণ দিচ্ছে। এ কারণে ভোক্তারাও বাকিতে পণ্যটি কিনতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করে মাসে মাসে কিস্তি শোধ করা যায়। যাকে ইকুয়েটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট বা ইএমআই বলা হয়। এর মাধ্যমে ১ লাখ টাকার পণ্য ক্রয় করে ১২ মাসে টাকা শোধ করা যায়। তবে গ্রাহকের কার্ডে খরচের যে পরিমাণ সীমা থাকে, সেই পরিমাণ টাকার পণ্য কিনতে পারে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ওয়ালটনের এসি কেনা যাচ্ছে। এ জন্য ১২ মাস পর্যন্ত কোনো সুদ গুনতে হচ্ছে না। বেসরকারি খাতের ব্র্যাক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সাউথইস্ট, ঢাকা, ইউসিবি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, ইস্টার্ণ, লংকাবাংলা, এসআইবিএল, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, প্রাইম, কমার্স ব্যাংক অব সিলন, এবি, ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট, এনআরবি, মিডল্যান্ড, এনসিসি, যমুনা ব্যাংক, ডাচ্–বাংলা, শাহজালাল ইসলামী, স্ট্যান্ডার্ড, ব্যাংক এশিয়ায় ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকেরা এই সুবিধা পাচ্ছেন। পাশাপাশি ওয়ালটন নিজেও কিস্তিতে এসি কেনার সুযোগ দিচ্ছে।
প্রায় একই ধরনের সুবিধা মিলছে এলজি বাটারফ্লাই, সিঙ্গার, গ্রি, জেনারেল, মিডিয়া, হায়ার, ওয়ার্লপুল, ট্রান্সটেক, স্যামসাং, ডাইকিন, ট্রান্সটেকসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসি কিনতেও। এর পাশাপাশি ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসে এসি কিনতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স দিচ্ছে বিশেষ ভোক্তাঋণ। এর মাধ্যমে ২০ হাজার টাকার বেশি বেতনভোগী যে কেউ ঋণ নিয়ে এসি কিনতে পারবেন। এতে ৩ থেকে ১৮ মাসের কিস্তি পরিশোধের সুবিধা রয়েছে।
গত জানুয়ারিতে দেশে ক্রেডিট কার্ড ছিল ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৩টি। ক্রেডিট কার্ডে শীর্ষে রয়েছে দি সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকদের সুবিধার্থে আমরা কিস্তিতে পণ্য কেনার সুযোগ দিই। এ জন্য বেশির ভাগ সময় কোনো সুদ আরোপ করা হয় না। গ্রাহকেরা যাতে স্বচ্ছন্দে পছন্দের পণ্য কিনতে পারেন, এ জন্যই এই সুবিধা।’
বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংক (বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড) প্রথম ক্রেডিট কার্ড সেবা নিয়ে আসে। কাছাকাছি সময়ে তৎকালীন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভনিক বাংলাদেশ (এখন লংকাবাংলা ফাইন্যান্স) ও ন্যাশনাল ব্যাংক সেবাটি চালু করে। এরপর এক এক করে অন্য ব্যাংকগুলোও এ সেবায় মনোযোগী হয়। বর্তমানে দেশে ৪০টির মতো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবা দিচ্ছে। প্রায় সব ব্যাংকেরই রয়েছে ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডের কার্ড সেবা। তবে এর বাইরে কয়েকটি ব্যাংক কার্ড সেবাকে অভিনবত্ব দিতে অন্য ব্র্যান্ডের কার্ডও এনেছে। যেমন সিটি ব্যাংক অ্যামেক্স, প্রাইম ব্যাংক জেবিসি, ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ডিনার্স ক্লাব, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক নেক্সাস পে ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ইউনিয়ন পে ইন্টারন্যাশনাল কার্ড সেবা দিচ্ছে।