এত সুযোগের পরেও শেয়ারবাজারে কালো টাকা খাটালেন মাত্র ২০৫ জন
চলতি বাজেটে নজিরবিহীনভাবে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ থাকলেও গত ছয় মাসে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন মাত্র ২০৫ জন। তাঁরা কর দিয়েছেন প্রায় ২৩ কোটি টাকা। ২৩০ কোটি টাকা সাদা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি বাজেটে শেয়ার কিনে বিক্রি না করে ১ বছর রেখে দেওয়ার শর্তে শেয়ারবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। আয়কর অধ্যাদেশের ১৯এএএ ধারা অনুযায়ী মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কোনো কালোটাকার মালিক এ সুবিধা নিলে তাঁকে আয়কর কর্তৃপক্ষসহ সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষই প্রশ্ন করবে না। সহজ কথায় কালোটাকা সাদা করার সুযোগ বিনা প্রশ্নে।
চলতি ২০২০–২১ অর্থবছরের বাজেটে ঢালাউভাবে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন কালোটাকার মালিকেরা। গত ১ জুলাই থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৭ হাজার ৬৫০ জন কালোটাকা সাদা করেছেন, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এসব ব্যক্তির সবাই যে বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তাতে কালোটাকা সাদা করার ঘোষণা দিয়েছেন। সব মিলিয়ে ১০ হাজার ২২০ কোটি টাকা সাদা হয়েছে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, এ বছর দুটি উপায়ে কালোটাকা সাদা হয়েছে। প্রথমত, ফ্ল্যাট ও জমি কিনে বা ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা বা নগদ টাকার ওপর নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে সাদা করেন অনেকে। এ জন্য নিয়ম করা হয়েছে, কালোটাকা সাদা করলে অর্থের উৎস জানতে চাইবে না এনবিআর। এমনকি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষও এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না।
কালোটাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত। যাঁরা এ সুযোগ নেবেন, তাঁরা সংশোধিত রিটার্ন জমা দিয়ে কিংবা আগামী বছর রিটার্ন জমার সময় তা ঘোষণা করতে পারবেন।
দেশে প্রায় সব সরকারই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো এ সুযোগ দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত ১৭ বার এ সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোবারই তেমন সাড়া মেলেনি। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সর্বোচ্চ ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুযোগটি নিয়েছিল। এরপর এবার ছয় মাসে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত হাজার করদাতা এ সুযোগ নেন।
রিটার্ন দিল ২৪ লাখ করদাতা
এ বছর বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়েছেন ২৪ লাখ ৯ হাজার ৩৫৭ জন কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন), যা গতবারের চেয়ে ৯ শতাংশ বেশি। গত ৩১ ডিসেম্বর এ বছরের রিটার্ন জমার সময় শেষ হয়েছে। বর্তমানে ৫২ লাখ ৭২ হাজার টিআইএনধারী আছেন। এ বছর ১ লাখ ৫ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার আয়কর আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে। প্রথম ছয় মাসে আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ২৩৮ কোটি টাকা।