শ্রমিকদের বেতন দিতে ৬০ কোটি টাকা ঋণ পাচ্ছে বেক্সিমকো
শ্রমিকদের অক্টোবর মাসের বেতন পরিশোধে বেক্সিমকো গ্রুপকে ৬০ কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বকেয়া বেতনের দাবিতে চার দিন ধরে গাজীপুর মহানগরীর সারাবো এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা।
জানা যায়, আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে যৌথভাবে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এক বার্তায় জানান, বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রম অসন্তোষ নিরসনের জন্য গত মাসের বেতন পরিশোধে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাধারণ শ্রমিকদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অনতিবিলম্বে কাজে যোগদান ও আশুলিয়া-চন্দ্রা এলাকার সব কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে অনুরোধ জানান সচিব।
জানতে চাইলে বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক (অর্থ ও করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) ওসমান কায়সার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শ্রম মন্ত্রণালয় ১০ কোটি ও অর্থ বিভাগ ৫০ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে। ঋণ পেতে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। তার জন্য ১-২ দিন সময় লাগবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের শ্রমিকদের বেতন দিতে ৮০ কোটি টাকা লাগবে। বাকি ২০ কোটি টাকা আমরা নিজেরা ব্যবস্থা করব।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ২৪টি কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। তবে ঋণখেলাপি হওয়ায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলো। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। প্রতি মাসে গড়ে ৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বেক্সিমকো।
এ বিষয়ে ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, কাঁচামাল আমদানি করতে না পারায় শ্রমিকদের একরকম বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। তাতে গত তিন মাসে বেতন-ভাতা বাবদ ৩৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তবে সরকার কারখানা খোলা রাখতে বলেছে। অথচ কাঁচামাল আমদানির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না। কারখানা চলতে দিলে ধীরে ধীরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
ওসমান কায়সার চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি ক্রেতাদের আমরা আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করেছি। শ্রমিকদের ব্যস্ত রাখতে সাবকন্ট্রাক্টে কিছু কাজ এনেছিলাম। তবে কয়েক দিন পরপর শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারণে সেগুলো করা সম্ভব হচ্ছে না।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেতন দিতে না পারায় বেক্সিমকো গ্রুপের একাধিক কারখানায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। ওই সময় বেতন দিতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক ৫৫ কোটি টাকা ঋণ ছাড় করে। যদিও জনতা ব্যাংকে গ্রুপটির ২৩ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার ঋণের মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা এখন খেলাপি।
এ ছাড়া ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার রপ্তানি আয় দেশে আনছে না গ্রুপটি। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। বর্তমানে তিনি কারাবন্দী।