আমরা তো এক বছরের বেশি সময় ধরে ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা দাবি করে আসছিলাম। শ্রমিকদের কোনোমতে খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য এই মজুরিটা দরকার। মালিকেরা বলছেন, তাঁরা ৫৬ শতাংশের মতো মজুরি বৃদ্ধি করছেন। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম তো ১৫০–২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং বাজারদরের সঙ্গে তুলনা করলে সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হয় না।
আমরা এই মজুরি প্রত্যাখ্যান করছি এবং তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি। ঘোষিত মজুরি প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ১০ নভেম্বর কর্মসূচি পালন করা হবে।
গত এক বছরে মূল্যস্ফীতি অনেক উঁচু অবস্থানে রয়েছে। মাছ–মাংসের কথা বাদই দিলাম, নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ, আলু, ডিমসহ সবজির মতো পণ্যের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন বাস্তবতায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিকের পক্ষে চলা অসম্ভব। এই টাকা দিয়ে শ্রমিকের ক্যালরির ঘাটতি পূরণ হবে না।
আমরা ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা খাত থেকে শ্রমিকদের জন্য সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলাম। এর মধ্যে চিকিৎসা, রেশনসহ বিভিন্ন দাবি ছিল। কিন্তু এসব দাবির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট ঘোষণা আমরা পাইনি। ফলে সাড়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে একজন শ্রমিকের পক্ষে এই বাজারে চলা সম্ভব নয়।
কিছুদিন আগে মালিকেরা প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেছিলেন। সেই প্রস্তাবটি শ্রমিকেরা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন শুরু করেন। তখন মালিকদের পক্ষ থেকে নতুন প্রস্তাব না দিয়ে পুরো শ্রমিক অঞ্চলে ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করা হয়। এই সময়ে দুজন শ্রমিক মারা গেছেন, একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে, অজ্ঞাতনামে অনেক মামলা হয়েছে। অর্থাৎ একধরনের ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি করার পরে আজকের প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা, যাতে শ্রমিকেরা চুপ থাকেন। কিন্তু ভয় দেখিয়ে তো শ্রমিকদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করা যাবে না।
অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মালিকপক্ষের প্রস্তাবের সঙ্গে শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবের ব্যবধান থাকে। তখন মজুরি প্রস্তাব নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সরকার সমন্বয়ের চেষ্টা করে। কিন্তু এবার শ্রমিকদের উপেক্ষা করে মালিকদের প্রস্তাবটিই সরকার চূড়ান্ত বলে ঘোষণা দিল। অর্থাৎ ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে সব পক্ষ মিলে মালিকদের স্বার্থই দেখেছে।