শিল্প খাতে গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক দাবি করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। সংগঠনটি বলেছে, নতুন ও বিদ্যমান গ্রাহকের জন্য আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। এতে দেশে বিনিয়োগ ও শিল্পের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে। গ্যাসের নতুন মূল্যহার পুনর্বিবেচনার দাবি করেছে সংগঠনটি।
এফআইসিসিআই আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদ্যমান গ্রাহকদের চেয়ে নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস বিক্রির চুক্তি, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হবে, এমনকি তা একই খাতের কোম্পানি হলেও। এই দ্বৈতমূল্য নীতি কেবল ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিকে লঙ্ঘন করে না, বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করছে।
এফআইসিসিআই বলেছে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের যে মডেলটি বিইআরসি ঘোষণা করেছে, তা নজিরবিহীন। এর কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে ব্যবসা পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা জ্বালানি খরচের কারণে উৎপাদন খরচে পার্থক্য দেখা দেবে। এ ধরনের মূল্যকাঠামো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থী। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন শুধু নতুন শিল্প বা বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে। ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলবে। বিনিয়োগ সম্মেলনের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে ভাবমূর্তি বৃদ্ধির অর্জনকে ধ্বংস করবে।
এফআইসিসিআইয়ের সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে একটি স্বচ্ছ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ কাঠামো আবশ্যক। আমরা জ্বালানির চাহিদা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন এই গ্যাসের মূল্যকাঠামো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মতো বড় লক্ষ্যকে প্রাধান্য দিয়ে নীতিনির্ধারণের দাবি জানাই।’
সংগঠনটি আরও বলেছে, নতুন ঘোষণা অনুযায়ী যেকোনো নতুন গ্যাস বিক্রির চুক্তি নতুন সংযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ব্যবহার করে আসা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও চলতি চুক্তি শেষ হলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফে যেতে পারবে। এ ধরনের বিধান শুধু অযৌক্তিক ও অন্যায্যই নয়, নিয়ন্ত্রকদের হাতে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ তৈরি করে দেয়। এ ধরনের বিধান ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভবিষ্যতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে।
বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়কে গ্যাসের বৈষম্যমূল্যক মূল্যহার অতিসত্বর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে এফআইসিসিআই। সেই সঙ্গে এ ধরনের জরুরি সংস্কারের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানায় সংগঠনটি।