বিস–কুই থেকে বিস্কুট
হালকা নাশতা বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক কাপ চায়ের সঙ্গে ‘টা’ হিসেবে বিস্কুটের প্রতিযোগী কমই আছে। চায়ের সহযোগী হিসেবে বিস্কুটের এই যাত্রা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। কিন্তু চাহিদা বা জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। তবে বিস্কুটের শুরুটা কিন্তু ‘টা’ হিসেবে ছিল না এবং সহজলভ্যও ছিল না।
বিস্কুটের ইতিহাস জানতে যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান ইংলিশ হেরিটেজ এবং ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ঘেঁটেঘুঁটে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। যুক্তরাজ্যেই এর উদ্ভব ও বিস্তার। দ্য গার্ডিয়ান বলছে, বিশ্বে ব্রিটিশদের চেয়ে অন্য কোনো দেশ বিস্কুট বেশি কেনেও না, খায়ও না।
ইংলিশ হেরিটেজ বিস্কুটের ইতিহাস সম্পর্কে বলেছে, ইংরেজি বিস্কুট শব্দটি ফরাসি ‘বিস-কুই’ থেকে এসেছে, যার মূলে রয়েছে, লাতিন ‘প্যানিস বিসকোটাস’—এর অর্থ হচ্ছে দুইবার রান্না করা রুটি। নিওলিথিক অর্থাৎ প্রস্তরযুগে বিস্কুটের মতো কিছু একটা পাথরের ওপর ‘বেক’ করা হতো।
সে সময় বিস্কুট অনেক শক্ত ছিল। এটা কয়েকবার বেক করা হতো, যাতে দীর্ঘ সময় ভালো থাকে। রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে বিস্কুটের সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়। তাদের এই বিস্কুটকে বলা যায় এখনকার ড্রাই কেক ধরনের, যা মুচমুচে হয়। এ বিস্কুট বিশেষ করে যোদ্ধাদের রেশন হিসেবে দেওয়া হতো।
বিস্কুট বলতে এখন যা বোঝায়, তা মূলত মধ্যযুগে ইউরোপে তৈরি হয়। আটা বা ময়দা, পানি, লবণ ব্যবহৃত হতো এসব বিস্কুট তৈরিতে।
জাহাজশিল্পের উত্থান ঘটার সঙ্গে ইউরোপ সারা বিশ্বে নিজেদের ব্যবসা ও ক্ষমতাকে বিস্তৃত করতে থাকে। নাবিকসহ সফরকারীদের দীর্ঘ সময় জাহাজে কাটাতে হতো। তখন তাজা খাবারের পাশাপাশি রাখা হতো বিস্কুট।
সতেরো শতকে বিস্কুটের চাহিদা বাড়তে থাকে। যদিও তা ধনীরাই খেতে পারত। কারণ চিনি সে সময় সহজলভ্য ছিল না। একই সময় যুক্তরাজ্য বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তোলে। পাশাপাশি দাস ব্যবসাও বাড়তে থাকে, যাকে কাজে লাগিয়ে ব্রিটিশেরা চিনির সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। এতে বিস্কুটও হাতের নাগালে চলে আসে।
দ্য গার্ডিয়ান–এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যযুগে মুসলমানেরা প্রথম বিস্কুট বানানোর জন্য তৈরি মণ্ডের সঙ্গে চিনি যুক্ত করে। তারা বিস্কুটকে একটি বিলাসবহুল স্বাস্থ্যকর খাবারে রূপান্তরিত করেছিল।