আর্জেন্টিনার মানুষও পরেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক
মেক্সিকোর বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ ফুটবলে দারুণভাবে ফিরে এসেছে। গতকাল শনিবার গভীর রাতে এই জয়ের পর বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা পাড়া–মহল্লায় আনন্দমিছিল করেন। তখন তাঁদের পরনে ছিল মেসিদের জার্সি। শুধু খেলা দেখার সময় নয়, বিশ্বকাপের মৌসুমে চলতে–ফিরতে প্রিয় দলের জার্সি গায়ে অনেককেই দেখা যায়।
অবশ্য বিশ্বকাপ ফুটবলের মৌসুমে বাংলাদেশে এটা নতুন কিছু নয়। ফুটবলের বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের দল না থাকলেও দেশের দর্শকদের বড় অংশই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল, এই দুই দলে বিভক্ত হয়ে যান। এবারের কাতার বিশ্বকাপেও সেটির ব্যতিক্রম হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথার খোঁচায়, জার্সি গায়ে দেওয়া, পতাকা টাঙানো, স্লোগানে-মিছিলে জমে উঠেছে এই দুই দলের সমর্থকদের লড়াই।
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা দলের সমর্থকেরা যেমন ভালোবেসে সাদা-আকাশি রঙের জার্সি পরেন, তেমনই আর্জেন্টিনার মানুষও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পরেন। খটকা লাগছে! পরিষ্কার করে বলা যাক, বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি আর্জেন্টিনাতেও তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়। সেসব পোশাকই কিনে পরেন আর্জেন্টিনার মানুষজন। শুধু তৈরি পোশাক নয়, বাংলাদেশ থেকে জুতা, ম্যাট্রেস, বাচ্চাদের খেলনাসহ বিভিন্ন পণ্য দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে যায়।
এমন তথ্যই জানিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। সংস্থাটি বলছে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনায় ৬৮ লাখ ৫৪ হাজার ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সর্বশেষ অর্থবছরে তা বেড়ে ৯৫ লাখ ১৮ হাজার ডলারে দাঁড়ায়। সুখবর হচ্ছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানি বেড়েছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে ৩৭ লাখ ৩০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা কিনা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ডলারের পণ্য।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, আর্জেন্টিনার মানুষ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কী পরিমাণ কেনেন। বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয় তার ৮৮ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ওভেন ও নিট পোশাক মিলে ৮৩ লাখ ৯১ হাজার ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫২ শতাংশ বেশি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আর্জেন্টিনায় ৫৫ লাখ ৫ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়।
আমেরিকার পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ব্রাজিল, চিলি ও উরুগুয়ে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্জেন্টিনায় বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ছাড়াও স্থানীয় কিছু ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে।মোহাম্মদ হাতেম, নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে আর্জেন্টিনায় ২৯ লাখ ১৮ হাজার ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২৯ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬০ শতাংশ বেশি। তার মানে আর্জেন্টিনার মানুষ বাংলাদেশি পোশাক কেনা বাড়াচ্ছেন। বিষয়টি শুধু আর্জেন্টিনার বাংলাদেশি সমর্থক নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্যও স্বস্তিদায়ক।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, আমেরিকার পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ব্রাজিল, চিলি ও উরুগুয়ে বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্জেন্টিনায় বৈশ্বিক ব্র্যান্ড ছাড়াও স্থানীয় কিছু ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি করে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল দলের জার্সি পরেন। ওই দেশগুলোর মানুষজনও বাংলাদেশি তৈরি পোশাক কেনেন। ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি কাকতালীয় হলেও খুবই আনন্দদায়ক।
আর্জেন্টিনা যেমন বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে তেমনি বাংলাদেশও দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করে। তার মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেলের মতো নিত্যপণ্যও। অবশ্য আর্জেন্টিনায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির তুলনায় পণ্য আমদানি প্রায় ৯৪ গুণ বেশি।
বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মতো দুই দেশের সয়াবিন তেলও এ দেশে বিক্রি হচ্ছে দেদার। সয়াবিন তেলে রাজত্ব আর্জেন্টিনারই। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্জেন্টিনা বাংলাদেশে ৫৫ কোটি ডলারের ৩ লাখ ৯০ হাজার টন সয়াবিন তেল রপ্তানি করেছে। অন্যদিকে ব্রাজিল রপ্তানি করেছে ৩৮ কোটি ডলারের ২ লাখ ৫৭ হাজার টন সয়াবিন তেল।
বিদায়ী অর্থবছরে আর্জেন্টিনা থেকে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের ৩ লাখ ৯০ হাজার টন ভুট্টা আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া দেশটি থেকে ১৫ কোটি ডলারের ২ লাখ ৮১ হাজার টন সয়াকেক এবং ৩০ লাখ ডলারের ১ হাজার ২২৮ টন তুলা আমদানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বাজার দখলে আর্জেন্টিনা ১৯ তম। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আর্জেন্টিনা ৯০ কোটি ডলারের ১২ লাখ টন পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশে।