ইলেকট্রিক পণ্য
গরমে বেড়েছে বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবসা
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ফ্যানের বিক্রি প্রতিষ্ঠানভেদে ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে।
এপ্রিল মাসজুড়ে প্রচণ্ড দাবদাহে দেশের মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত। প্রচণ্ড এই গরমে বৈদ্যুতিক পাখা বা ফ্যানের নিচে থাকলে কিছুটা প্রশান্তি মেলে। ফলে টানা গরমে ফ্যানের চাহিদা বাড়ছে। এসব ফ্যানের মধ্যে বড় অংশই দেশে উৎপাদিত।
ফ্যান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা জানান, হঠাৎ করে গরমের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ফ্যানের বিক্রি প্রতিষ্ঠানভেদে ২০-৩০ শতাংশ বেড়েছে। তবে কাঁচামালের স্বল্পতা এবং ঈদুল ফিতরের ছুটির কারণে সপ্তাহখানেক উৎপাদন বন্ধ থাকায় চাহিদা অনুযায়ী ফ্যান সরবরাহ করতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, দুই দশক আগেও বাজারে নন-ব্র্যান্ডের ফ্যানের একচ্ছত্র রাজত্ব ছিল। পাশাপাশি পাকিস্তান, ভারত ও চীন থেকে আমদানি হয়েও আসত বিভিন্ন ধরনের ফ্যান। বাজারের আকার বাড়তে থাকায় ইলেকট্রনিকস খাতের বড় কোম্পানিগুলো ফ্যান উৎপাদনে নামে। বর্তমানে আরএফএল, ওয়ালটন, বিআরবি, যমুনা, মিনিস্টার, সুপারস্টার, কনকা, এনার্জি প্যাকসহ বিভিন্ন দেশি ব্র্যান্ডের দখলে আছে ফ্যানের বাজারের প্রায় ৫০ শতাংশ। এতে করে বিদেশ থেকে আমদানি কমে গেছে।
দেশে ফ্যানের বাজার কত বড়, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, সিলিং ফ্যানের বার্ষিক চাহিদা ৫০-৬০ লাখ। গড় মূল্য আড়াই হাজার টাকা ধরলে শুধু সিলিং ফ্যানের বাজার ১ হাজার ২৫০ কোটি থেকে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য ফ্যান হিসাবে নিলে বাজারের আকার দাঁড়ায় ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।
ফ্যানের বাজারের শীর্ষস্থানের একাধিক ব্র্যান্ডের কর্মকর্তারা জানান, ফ্যানের মধ্যে দেশে সিলিং ফ্যানের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। এর বাইরে গ্রামে–গঞ্জে লোডশেডিংয়ের কারণে রিচার্জেবল টেবিল এবং ওয়াল ফ্যানের বিক্রিও বেড়েছে। এ ছাড়া টেবিল, স্ট্যান্ড, এগজস্ট, মেগাসহ প্রায় সব ধরনের ফ্যান দেশেই তৈরি হয়। প্রতিবছর ফ্যানের ব্যবসা ১০-১৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই বছর প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম হলেও দেশের ফ্যানের বাজার সম্ভাবনাময়।
চার দশকের বেশি সময় বৈদ্যুতিক পাখা উৎপাদন ও বাজারজাতের সঙ্গে যুক্ত যমুনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিকস। তারা বর্তমানে সিলিং ফ্যান ছাড়া টেবিল, রিচার্জেবল টেবিল ফ্যান, এগজস্ট ও হাইস্পিড ফ্যান বিক্রি করে।
জানতে চাইলে যমুনা ইলেকট্রনিকসের পরিচালক সেলিম উল্ল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘১৯৭৮ সালে সিলিং ফ্যান দিয়েই যমুনা ইলেকট্রনিকসের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ফলে সিলিং ফ্যানের ওপর আমরা সব সময়ই বিশেষ জোর দিই। প্রচলিত ফ্যানের পাশাপাশি আমরা বর্তমানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বিএলডিসি (ব্রাশ লেস ডিসি মোটর) প্রযুক্তির ফ্যান উৎপাদন শুরুর সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেলিম উল্ল্যা বলেন, ‘গরমের কারণে ফ্যানের চাহিদা বেশ বেড়ে গেছে। ফলে মৌসুমের শুরুতে আমাদের ফ্যানের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশের বেশি হয়েছে।’
দেশি ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড মিনিস্টার-মাইওয়ান দেড় দশক ধরে বৈদ্যুতিক পাখা উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। বর্তমানে তারা সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি টেবিল ফ্যান ও রিচার্জেবল ফ্যানও বিক্রি করছে। তাদের সিলিং ফ্যানের দাম ৩ হাজার ৪৯০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৬৯০ টাকা। এই গরমে লাক্সারি ও গ্যালাক্সি মডেলের ফ্যান কিনলে ইলেকট্রিক কেটলি ফ্রি দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
মিনিস্টার-মাইওয়ান গ্রুপের হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন সোহেল কিবরিয়া বলেন, ‘চলমান তাপদাহে আমাদের ফ্যান বিক্রি ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। হঠাৎ করে ফ্যানের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ করতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ, ডলার–সংকট ও উচ্চ মূল্যের কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের ঋণপত্র খোলা যায়নি। সে কারণে কাঁচামালের সংকটও রয়েছে।’
ফ্যানের বাজারে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান আরএফএল গ্রুপ। ভিশন ও ক্লিক নামে তাদের ফ্যানের দুটি ব্র্যান্ড রয়েছে। প্রচলিত ফ্যানের পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বিএলডিসি প্রযুক্তির ফ্যান বিক্রি করছে তারা। তাদের সিলিং ফ্যানের দাম ৩ হাজার ২০০ থেকে ১৮ হাজার টাকা।
জানতে চাইলে আরএফএল ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘ফ্যানের চাহিদা বলতে গেলে বছরজুড়েই থাকে। গত বছর আমরা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উৎপাদন করেছি। এবারের গরমে ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। ঈদের ছুটিতে কারখানা বন্ধ থাকায় সরবরাহে একটু ঘাটতি হচ্ছে। আগামী মাস থেকে সরবরাহ ঠিক হয়ে যাবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, বছর শেষে ফ্যান বিক্রিতে ২০-৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি থাকবে। যেহেতু ভবিষ্যতেও গরম বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে, সেহেতু ফ্যানে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে।’