৯ কারখানায় দিনভর শ্রমিক অসন্তোষ, আবারও অস্থিতিশীল গাজীপুর

দুই দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার পর আবারও গাজীপুর শিল্পনগর অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। আজ মঙ্গলবার বিভিন্ন দাবিতে মোট ৯টি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা গেছে। দাবি আদায়ে কোথাও মহাসড়ক অবরোধ, কোথাও–বা কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকেরা। এতে কারখানাগুলোর উৎপাদন কার্যক্রম যেমন বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি সাধারণ মানুষের চলাচলেও ভোগান্তি ঘটে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২১ আগস্ট ছয় দফা দাবিতে গাজীপুরে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য কারখানায়ও বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়।

মাঝে কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও শুরু হয় আন্দোলন। এরপর প্রতিদিনই বিক্ষোভ লেগে ছিল। দাবি আদায়ে কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঝামেলা এড়াতে ছুটিসহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় অনেক কারখানা। গত দুই দিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। তাতে বন্ধ কারখানাগুলো চালু হয়। কিন্তু আজ আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত দুই দিন গাজীপুর পুরোপুরি শান্ত ছিল। কোথাও কোনো ঝামেলা ছিল না। কিন্তু আজ আবার শুরু হলো। অনেক কারখানার মালিক শ্রমিকদের প্রতিশ্রুতি দিয়েও নির্ধারিত সময়ে বেতন পরিশোধ করেননি। তাই শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেছেন। আমরা যত দূর সম্ভব শ্রমিকদের বুঝিয়ে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গাজীপুরে মোট নিবন্ধিত কারখানা আছে ২ হাজার ৬৩৩টি। এর মধ্যে তৈরি পোশাক (আরএমজি) কারখানা ১ হাজার ১২০টি এবং অন্যান্য কারখানা ১ হাজার ৫১৩টি। এ ছাড়া অনিবন্ধিত কারখানা রয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০টি। সব মিলিয়ে এসব কারখানায় ২২ লাখের মতো শ্রমিক কাজ করেন।

বকেয়া বেতন দাবি, সড়ক অবরোধ

গাজীপুর শিল্প পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতনের দাবিতে গতকাল সকালে টঙ্গীর খাঁপাড়া এলাকার সিজন ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার সামনে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাঁরা খাঁপাড়ার এশিয়া পাম্প এলাকায় ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে মানুষের চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি দেখা দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুর ১২টার দিকে সড়ক ছাড়েন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা।

শ্রমিকদের দাবি, কারখানার মালিক প্রতি মাসেই তাঁদের বেতন নিয়ে ঝামেলা করেন। গত জুলাই ও আগস্ট মাসের বেতন তাঁরা এখনো পাননি। এতে তাঁদের জীবনধারণ হুমকির মুখে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সিজন ড্রেসেস লিমিটেডের মালিক বাহাউদ্দিন চৌধুরী বাকের প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই মাসের বেতন একসঙ্গে দেওয়া সম্ভব নয়। ১৫ সেপ্টেম্বর জুলাই মাসের অর্ধেক বেতন দেব বলেছিলাম। শ্রমিকেরাও সেটা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যাংকের টাকা উত্তোলনসংক্রান্ত ঝামেলায় সেদিন টাকা দিতে পারিনি। এর মাঝেই হঠাৎ শ্রমিকেরা আজ বিক্ষোভ শুরু করেছেন।’

একইভাবে জুলাই মাসের বেতনের দাবিতে সকাল ৯টায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের জিরানী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বেঙ্গল পলিমার নামের একটি কারখানার ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক। এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

আগস্ট মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর-টাঙ্গাইল সড়কের চন্দ্রা মোড় এলাকায় নায়াগ্রা টেক্সটাইল ও চক্রবর্তী এলাকায় বেক্সিমকো টেক্সটাইলের শ্রমিকদের কিছু সময়ের জন্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার খবর পাওয়া যায়।

শিল্প পুলিশের সহাকারী পুলিশ সুপার মো. মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময় বেক্সিমকো টেক্সটাইলের একটি ইউনিট আগুনে পুড়ে যায়। তখন ৭০ থেকে ৮০ জন শ্রমিক চাকরি হারান। পাশাপাশি জুলাই মাসের বেতন পাননি শ্রমিকেরা। তাই তাঁরা বেতন ও চাকরির দাবিতে বিক্ষোভ করেন। আর বাকি দুই কারখানায় মালিকপক্ষ কথা দিয়েও নির্ধারিত সময়ে আগস্ট মাসের বেতন পরিশোধ করতে না পারায় শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন।

৫ কারখানায় কর্মবিরতি, উৎপাদন বন্ধ

গত ১০ সেপ্টেম্বর ১৩ দফা দাবিতে কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেছিলেন টঙ্গীর মেঘনা সড়কের ব্রাভো অ্যাপারেলস ও গার্মেন্টস এক্সপোর্ট ভিলেজের শ্রমিকেরা। সেদিন মালিকপক্ষ দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। কিন্তু সব দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ দিনভর কারখানার ভেতর কর্মবিরতি পালন করেন কারখানা দুটির শ্রমিকেরা।

একইভাবে বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করেন গাজীপুরের সদর উপজেলার জয়দেবপুর থানার শিরিরচালা এলাকার এক্সিকিউটিভ হাই ফ্যাশন ও রাজেন্দ্রপুর তাসমিয়া হারবাল এবং নগরের কাশিমপুর এলাকার ভেরিতাস ফার্মাসিটিক্যালসের শ্রমিকেরা।