মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান নিয়ে শঙ্কা
শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে বিনিয়োগে একধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন করে কেউ বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। এ কারণে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খোলা হয়েছে ৫৮ কোটি মার্কিন ডলারের। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৭ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণপত্র খোলা কমেছে ২৯ কোটি ডলার বা ৩৩ শতাংশ।
ঋণপত্র খোলা কমার পাশাপাশি কমেছে ঋণপত্র নিষ্পত্তির হারও। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৯ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৮৫ কোটি ডলারের। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ১৬ কোটি ডলারের বা ১৯ শতাংশ।
ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র খোলা কমে যাওয়ার অর্থ হলো বিনিয়োগ থমকে যাওয়া। আর বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়বে না। ফলে অর্থনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একাধিক শিল্পোদ্যোক্তা জানান, আগের চেয়ে বিনিয়োগ এখন অনেক বেশি দামি হয়ে গেছে। একদিকে বেড়েছে ডলারের দাম, অন্যদিকে ব্যাংক সুদ হারও চড়া। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগ করতে গেলে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে। আবার উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে বাজারে পণ্যের চাহিদাও কমে গেছে। সব মিলিয়ে বিনিয়োগের জন্য এ সময়টাকে মোটেই অনুকূল মনে করছেন না ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগে আগ্রহী উদ্যোক্তারাও এখন নতুন বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখছেন। এর ফলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র খোলা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। ডলারের দাম ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ খরচ আগের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। ফলে এই অবস্থায় কেউ বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে, না এটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগ না বাড়লে প্রবৃদ্ধির গতিও শ্লথ হয়ে যাবে। কমবে কর্মসংস্থান, যা অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়াবে।
মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্রের পাশাপাশি কমছে শিল্পের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলাও। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মধ্যবর্তী পণ্যের ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৩৩ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৫২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির ঋণপত্র খোলা কমেছে ১৯ কোটি ডলারের বা সাড়ে ১২ শতাংশ। ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে তার চেয়েও বেশি হারে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মধ্যবর্তী পণ্যের ঋণপত্র নিষ্পত্তি হয়েছে ১৫৫ কোটি ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৮০ কোটি ডলারের। সেই হিসাবে ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে ২৫ কোটি ডলারের বা সাড়ে ১৩ শতাংশ।