বড়, ছোট বা অতিক্ষুদ্র শিল্প চিনবেন যেভাবে

উৎপাদনের ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র শিল্প বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যেসব প্রতিষ্ঠানের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৭৫ লাখ টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২৬-১২০ জন শ্রমিক রয়েছে। সেবা খাতের ক্ষুদ্র শিল্পের প্রতিষ্ঠানের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা হলেই চলবে। 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত নভেম্বরে দশম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় একটি স্টলে গয়না দেখছেন একজন ক্রেতা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, দেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অবদান ২৫ শতাংশের বেশি। শ্রমঘন ও বৃহৎ ভোক্তাশ্রেণির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এসএমই খাতের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও এ খাতের বড় অবদান রয়েছে। তবে কারা এসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কারা বৃহৎ শিল্প হিসেবে বিবেচিত হয়, তা জেনে রাখা জরুরি। জাতীয় শিল্পনীতি, ২০২২–এ এসব খাতের সংজ্ঞা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। 

বৃহৎ শিল্প

উৎপাদনের ক্ষেত্রে ‘বৃহৎ শিল্প’ হিসেবে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ভবনের বাইরে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি তৈরি পোশাক বা শ্রমঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছাড়া যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৩০০ জনের বেশি শ্রমিক রয়েছে।

যেসব তৈরি পোশাক বা শ্রমঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকের সংখ্যা এক হাজারের বেশি, সেসব তৈরি পোশাকশিল্প বৃহৎ শিল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে।

সেবা শিল্পের ক্ষেত্রে ‘বৃহৎ শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৩০ কোটি টাকার বেশি কিংবা যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ১২০ জনের বেশি শ্রমিক রয়েছে।

মাঝারি শিল্প 

উৎপাদন খাতে ‘মাঝারি শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১৫ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ১২১-৩০০ জন শ্রমিক রয়েছে। তবে তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান বা শ্রমঘন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মাঝারি শিল্পে শ্রমিকের সংখ্যা হতে হবে সর্বোচ্চ ১ হাজার জন।

সেবাশিল্পের ক্ষেত্রে ‘মাঝারি শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ২ কোটি থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ৫১-১২০ জন শ্রমিক রয়েছে। 

তবে কোনো একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি বৃহৎ শিল্পের অন্তর্ভুক্তও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ কর্মকাণ্ড বৃহৎ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান বা শ্রমঘন শিল্পের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।

ক্ষুদ্র শিল্প

উৎপাদনের ক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র বা ছোট শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যেসব প্রতিষ্ঠানের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৭৫ লাখ থেকে ১৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ২৬-১২০ জন শ্রমিক রয়েছে। 

সেবা খাতের ক্ষেত্রে ‘ক্ষুদ্র শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ১৬ থেকে ৫০ জন শ্রমিক রয়েছে। 

তবে কোন একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে এ কর্মকাণ্ড মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান বা শ্রমঘন শিল্পের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।

মাইক্রো শিল্প

‘মাইক্রো বা অতি ক্ষুদ্র শিল্প’ বলতে সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ১ থেকে ২৫ জন শ্রমিক রয়েছে। 

সেবাশিল্পের ক্ষেত্রে ‘মাইক্রো শিল্প’ বলতে সেসব প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ টাকার নিচে। পাশাপাশি যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ১৫ জন শ্রমিক রয়েছে।

তবে কোনো একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড মাইক্রো শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ডটি ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে। তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান বা শ্রমঘন শিল্পের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।

কুটির শিল্প

‘কুটির শিল্প’ বলতে পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্যভুক্ত সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে, যাদের জমি ও কারখানা ভবন ছাড়া স্থায়ী সম্পদের মূল্য ১০ লাখ টাকার নিচে এবং যা পারিবারিক সদস্যসহ অন্যান্য সদস্য সমন্বয়ে গঠিত এবং সর্বোচ্চ জনবল ১৫ জনের বেশি নয়। 

তবে কোনো একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি মাইক্রো শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ডটি মাইক্রো শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।

হস্ত ও কারুশিল্প

‘হস্ত ও কারুশিল্প’ বলতে কারুশিল্পীর শৈল্পিক মনন ও শ্রমের ব্যাপক ব্যবহার বা বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত মেধা, দক্ষতা ও কলাকৌশলের মাধ্যমে অথবা সৃজনশীল ব্যক্তি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, প্রয়োজনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এবং সময়ের পরিবর্তনশীলতাকে সমন্বয় করে নান্দনিক ও ব্যবহারিক যে পণ্য উৎপাদন করে। 

হাইটেক শিল্প

‘হাইটেক শিল্প’ বলতে যেসব শিল্পকে বোঝাবে, যেগুলো জ্ঞান ও পুঁজি এবং উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর, পরিবেশবান্ধব, ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইটি), সফটওয়্যার টেকনোলজি, বায়োটেকনোলজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্রিন টেকনোলজি, হার্ডওয়্যার, ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যানাবল্ড সার্ভিসেস (আইটিইএস) এবং রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আরঅ্যান্ডডি) নির্ভর শিল্প।

ভারী শিল্প

‘ভারী শিল্প’ বলতে এমন শিল্পকে বোঝাবে, যেখানে বৃহৎ আকারের উদ্যোগ, বড় যন্ত্রপাতি, ভূমির বৃহৎ এলাকা, উচ্চ ধরন ইত্যাদি বিষয় জড়িত থাকবে। পাশাপাশি যেসব শিল্প হালকা প্রকৌশল শিল্পের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। উদাহরণস্বরূপ জাহাজনির্মাণ শিল্প, পেট্রোলিয়াম পরিশোধন শিল্প, ইস্পাতশিল্প, মোটরগাড়ি নির্মাণ শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্প ইত্যাদি ভারী শিল্প হিসেবে গণ্য হবে।

নারী শিল্পোদ্যোক্তা

যদি কোনো নারী ব্যক্তিমালিকানাধীন বা প্রোপ্রাইটরি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বা প্রোপ্রাইটর হন কিংবা অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা জয়েন্ট স্টক কোম্পানিতে নিবন্ধিত প্রাইভেট কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে ন্যূনতম ৫১ শতাংশ (শতকরা ৫১ ভাগ) অংশের মালিক হন, তাহলে তিনি নারী শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে বিবেচিত হবেন। 

স্টার্টআপ

স্টার্টআপ বলতে এক বা একাধিক ব্যবসায়িক উদ্যোক্তার সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত এমন ব্যবসায়িক বা শিল্প উদ্যোগকে বোঝাবে, যাঁদের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে বড় হওয়ার ও দ্রুত প্রবৃদ্ধি লাভের সম্ভাবনা আছে। পাশাপাশি মুনাফা অর্জনকারী নতুন ও অনন্য পণ্য উৎপাদন বা সেবা বিক্রির ব্যবসা নিয়ে বাজারে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। 

শিল্প ক্লাস্টার

পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত ৫০টি বা ততোধিক উৎপাদন বা সেবা খাতভুক্ত কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান যদি একই বা সমজাতীয় পণ্য বা সেবা উৎপাদন করে বা ব্যাকওয়ার্ড ফরওয়ার্ড লিংকেজ তৈরির মাধ্যমে সমজাতীয় পণ্য উৎপাদনে সহায়তা করে, তবে ওই এলাকাটিকে শিল্প ক্লাস্টার হিসেবে গণ্য করা হবে।